জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিপিসির দৈনিক ক্ষতি ১৯ কোটি

বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের দামে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপের আশংকা
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন

রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। গত মঙ্গলবার আরব গালফ মার্কেটে প্রতি ব্যারেল ডিজেল বিক্রি হয়েছে ১১৫ দশমিক ০৮ মার্কিন ডলার দামে। এর ২ দিন আগে অর্থাৎ রোববার আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ১১২ দশমিক ৭৭ মার্কিন ডলার।

একইভাবে বাড়ছে ফার্নেস অয়েল ও অকটেনের দাম। এভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধুমাত্র ডিজেল এবং অকটেন বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দৈনিক ক্ষতি ১৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারকে প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির আপডেট জানাচ্ছি। জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সাধ্যমত কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।'

জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার দর জানতে এশিয়া-প্যাসিফিক/আরব গালফ মার্কেট স্ক্যান (প্ল্যাটস-Platts) রিপোর্ট বিশ্লেষণে করে দেখা যায়, গত ৩ জানুয়ারি অকটেনের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৯০ দশমিক ০৪ ডলার। ৩১ জানুয়ারি ছিল ১০২ দশমিক ৭৩ ডলার প্রতি ব্যারেল। আর ১ মার্চ তা বেড়ে দাড়ায় ১১৪ দশমিক ২৮ মার্কিন ডলারে।

একইভাবে আরব গালফ মার্কেটে ৩ জানুয়ারি প্রতি ব্যারেল ডিজেল বিক্রি হয়েছিল (ফ্রেইড অন বোর্ড-এফওবি মূল্য) ৮৭ দশমিক ৯৫ ডলার দামে। ৩ ফেব্রুয়ারি ছিল ১০৪ দশমিক ৪৭ ডলার প্রতি ব্যারেল। আর চলতি মাসের প্রথম দিন আরব গালফ মার্কেটে ডিজেল বিক্রি হয়েছে প্রতি ব্যারেল ১১৫ দশমিক ০৮ ডলার দামে।

গত মঙ্গলবার ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫৫৫ দশমিক ৭১ ডলার প্রতি মেট্রিক টন হিসাবে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে এখন বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, শুধু ডিজেল নয়, বিশ্ববাজারে প্রায় সব ধরণের জ্বালানি পণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ডিজেলে ১৩ টাকা এবং অকটেনের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে ৬ টাকা করে লোকসান দেওয়ায় দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি টাকা।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন ৮৫ ডলার ছিল তখন সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা মূল্য সমন্বয় করে। গত ২০ বছরে দেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে এবং কমেছে ৪ বার।

দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৮ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। ২০২১ সালের সার্চে ডিজেলের চাহিদা ছিল ১৭ হাজার মেট্রিক টন।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় ১ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। বেশি ডিজেল বিক্রির হওয়ার ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না বিপিসির কর্মকর্তারা।

বিপিসির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে এই আশংকায় খুচরা পর্যায়ে মজুদ বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ডিজেলের বিক্রি বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।

গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসি ব্রেক ইভেনে ছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৪ ডলারের কম ছিল। ১২ জানুয়ারি ডিজেলের আমদানি মূল্য ৯৫ দশমিক ৫৭ মার্কিন ডলারে উঠে আসলে বিপিসির লোকসান হওয়া শুরু করে।

Comments

The Daily Star  | English

Ritu Porna brace takes Bangladesh to verge of history

Peter Butler's charges beat favourites Myanmar 2-1 in Asian Cup Qualifiers

2h ago