প্রধান ৩ ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পের কাজ শেষের পথে

পদ্মসেতু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার ফাইল ফটো

ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর ও ঢাকা মেট্রো রেল-৬'র কাজ প্রায় শেষের পথে আছে। যদিও, অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি প্রত্যাশার চেয়ে কম বলে এক অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

ওই প্রতিবেদনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

গত সোমবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সড়কপথের মাধ্যমে নদীর উভয় পাশ সংযোগকারী সব রোডস্ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ করেছে।

৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ওই সেতুর ভৌত কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। গত জুনে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন আগামী বছরের জুনে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনের জন্য বাকি কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের ভৌত কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত বন্দরটির কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার এমআরটি-৬'র বাস্তবায়ন হার ৭১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আইএমইডি এর কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

এ ছাড়া, আরেকটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভৌত অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার ৭১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার প্রকল্পটির মোট ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির অর্থায়নের এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

রাশিয়া সমর্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের ৩৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। সরকার চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে প্রকল্পটির জন্য ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে।

চলতি বছরের মার্চে প্রকল্পটি পরিদর্শন করার পর আইএমইডি সরকারের অংশের ব্যয় ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে এবং এর বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নে আরও কৌশলী ও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইনের কাজে গত জুলাই পর্যন্ত ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৬১ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। আইএমইডি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি সত্ত্বেও চীনা ও স্থানীয় শ্রমিকরা এ প্রকল্পে পুরোদমে কাজ করছেন। প্রতিবেদনে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়েকে মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১'র ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার প্রকল্প এক দশমিক পাঁচ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত চলা ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার এমআরটি-৫ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে তিন দশমিক ১১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত।

উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ জুলাই পর্যন্ত ৭১ দশমিক ৩৩ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি রেকর্ড করেছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত সেখানে ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

গত জুনে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলোর সার্বিক বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

১৪টি মেগা প্রকল্পের জন্য ৫১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পগুলো রয়েছে। এ ১৪টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে আটটি ২০২২ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু, গত জুনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পসহ এসব প্রকল্পের কোনোটিই ২০২২ অর্থবছরে কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পায়নি।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

3h ago