ভারতীয় ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যবহার হয়েছে ৬ শতাংশ

ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পরিবহনে সুবিধার জন্য আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এই প্রকল্পের ৩,৫৬৭.৮৫ কোটি টাকার মধ্যে ৬৪ শতাংশ আসবে ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায়। গতকাল রোববার ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: মাসুক হৃদয়

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ভারতের কাছ থেকে গত এক দশকে তিনটি এলওসি বা লাইন অব ক্রেডিট ধরনের ঋণের আওতায় নেওয়া ৭ বিলিয়ন ডলারের মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে সরকার ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪১০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১২টির অর্থায়ন হয়েছে ২০১০ সালের আগস্টে স্বাক্ষরিত প্রথম এলওসির অর্থ দিয়ে। অন্য দুটি প্রকল্প ছিল ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত তৃতীয় এলওসির অধীনে।

দাতা সংস্থা এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার আবাসিক প্রতিনিধি প্রিয়াংশু তিওয়ারি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানিয়েছেন।

এলওসি হচ্ছে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া নির্ধারিত পরিমাণ অর্থের নমনীয় ঋণ, যা কেউ প্রয়োজন অনুসারে নিতে পারে, আর তৎক্ষণাৎ কিংবা সময় নিয়ে শোধ করতে পারে।

তিওয়ারি তার এ সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনে বিশদভাবে প্রকল্প প্রণয়ন ও পরিকল্পনার সামগ্রিক মান উন্নত করার ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধা অনুসরণের পরামর্শ দেন।

একইসঙ্গে তার কাছ থেকে ভারতীয় প্রকল্প কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে প্রবেশ বা পুনঃপ্রবেশের সুবিধা নিশ্চিতের পরামর্শও আসে। কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই যারা ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছেন।

পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃক দ্রুত সেবা প্রদান নিশ্চিত করা ও তাদের সামর্থ্য বাড়ানোর আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিওয়ারি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তারা এর মধ্যেই ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ ত্বরান্বিত করতে সুপারিশগুলো গ্রহণ করেছেন।

ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, এলওসির অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ১৭২ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট তহবিলের ২৫ শতাংশ।

ইআরডি কর্মকর্তার বক্তব্য, মহামারি সত্ত্বেও ২০১৯ সাল থেকে ৭৮০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ছাড় করা অর্থের পরিমাণ মোট তহবিলের ১১ শতাংশ বা ৮৫২ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার এসেছে ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের প্রথম এলওসি থেকে। ১১৫ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় এলওসি থেকে। আর ৭৬ মিলিয়ন ডলার এসেছে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসি থেকে।

ইআরডির ওই কর্মকর্তা বলছেন, প্রকল্প ব্যয় সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ইআরডি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ভারতীয় ঠিকাদার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে।

তিনি আরও বলেন, সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য সংস্থাটি এমনকি প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে। তবুও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ধীর।

এ পর্যন্ত তিনটি এলওসির অধীনে প্রায় ৪৩টি প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। শেষ হওয়া ১৪টি প্রকল্প ছিল বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ক্রয় সংশ্লিষ্ট। বাকি ২৯টি প্রকল্পে খুঁড়িয়ে চলছে।

বাংলাদেশে প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত বাস্তবায়ন স্তরেই বিলম্ব হয়।

এ ছাড়া প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের দরকার হয়।

ভারতের ঋণচুক্তি অনুসারে, এর আওতাধীন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার অন্তত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেশী দেশ থেকেই কিনতে হবে। যা এখন ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের অভিমত, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ক্ষেত্রে এই ধরনের শর্ত একটি বড় বাধা।

তৃতীয় এলওসির আওতায় নেওয়া ১৬টি প্রকল্পের একটির কাজও শেষ হয়নি।

এর আগে ইআরডি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ভারত প্রতি বছর ৪০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করবে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য প্রক্রিয়াটি ধীর হয়ে যায়।

যদিও তারা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরে ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Yunus in Rome to attend Pope Francis' funeral

The chief adviser is visiting the Vatican to attend Pope Francis' funeral

2h ago