ভারতের সঙ্গে সিইপিএ নিয়ে আলোচনা শুরু আগামী বছর

ভারতের সঙ্গে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সই বিষয়ে আগামী বছর আলোচনা শুরু হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চুক্তি সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ পর্যায়ে আছে এবং শিগগির আলোচনা শুরু হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ অনুবিভাগ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, 'বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এই মাসের শেষ নাগাদ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা দেবে।'
বিএফটিআই এর কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করবে।
মাহবুবুল আরও বলেন, 'বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত সিইপিএর তিনটি ভিন্ন মাত্রা রয়েছে, যা হলো পণ্যের বাণিজ্য, সেবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ।'
সিইপিএ তে বিভিন্ন ধরনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, কারণ এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ধারণা সাধারণ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি থেকে অনেক বেশি বিস্তৃত আকারের।
সিইপিএর লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য সংক্রান্ত জটিলতা, ট্যারিফ, সরকারি ক্রয়, বিনিয়োগ, সংযুক্তি ও বিনিয়োগের সুরক্ষাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করা।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিভিন্ন জটিলতাকে দূর করার জন্যেও এটি একটি বড় আকারের উদ্যোগ।
সিইপিএ ঠিকমত প্রতিষ্ঠিত হলে দুই দেশের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা জন্য তাদের সুবিধামত চুক্তি বেছে নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) চালু আছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির (আপটা) সদস্য, কিন্তু ব্যবসায়ীরা সাফটা ব্যবহার করেন, কারণ এতে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সাফটার আওতায় ২৫টি অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলবিহীন পানীয় দ্রব্য ছাড়া অন্যান্য সব পণ্যের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করছে।
বিএফটিআই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাফর উদ্দীন জানান, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং খুব সম্ভবত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিটির কাছে এটি পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ে ২০১৮ তে সিইপিএ সাক্ষর করতে একমত হয়।
সাবেক জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব জাফর বলেন, 'বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সংস্থার পরামর্শ নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।'
ভারত তার স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ব্রিফিং এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের সার্বিক আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩৯৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ও ২৯১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
তবে কিছু নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা ও পণ্যে বৈচিত্র্যের অভাবের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ এখনও অনেক কম।
স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে এসে বাংলাদেশ ২০১৯-১৯ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য ভারত থেকে প্রতি বছর আমদানি করে।
বিএফটিআই এর প্রধান বলেন, 'প্রস্তাবিত সিইপিএ থেকে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান এই বড় আকারের বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনা।'
তবে সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে জানা গেছে, এই ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ ভারতের মতো এত বিস্তৃত অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য বৈচিত্র্য বাংলাদেশের নেই।
তবে প্রাণ ও হাতিলের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান ভারতে ভালো করছে। এই যুক্তি থেকে বলা যায়, সিইপিএ সই হলে আরও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাংলাদেশের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারবে।
একইভাবে, কিছু ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং সরকার ইতোমধ্যে দেশে ভারতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক এলাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
জাফর আরও বলেন, 'আমাদের উচিত এমন সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে ভারতের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি বাংলাদেশে কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ।'
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।
Comments