সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে সরকার

দেশের আরও প্রায় ১০০ উপজেলার শতভাগ বয়স্ক দরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। তবে, সচ্ছলরা যাতে এসব কর্মসূচির অপব্যবহার করতে না পারে, সেই কারণ দেখিয়ে পরিকল্পনাটি বাতিল করা হচ্ছে।
বয়স্ক ভাতা সংগ্রহের জন্য ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় একদল মানুষের অপেক্ষা। ছবি: এস কে এনামুল হক/ ফাইল

দেশের আরও প্রায় ১০০ উপজেলার শতভাগ বয়স্ক দরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। তবে, সচ্ছলরা যাতে এসব কর্মসূচির অপব্যবহার করতে না পারে, সেই কারণ দেখিয়ে পরিকল্পনাটি বাতিল করা হচ্ছে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আরও ১০০টি উপজেলার শতভাগ দরিদ্রকে ৩টি বড় ধরনের নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি।

কর্মসূচিগুলো হলো—বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও দুস্থ নারীদের জন্য ভাতা এবং অসচ্ছল-প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে ৯ লাখেরও বেশি নতুন সুবিধাভোগী কর্মসূচির আওতায় আসবে এবং এতে ৫৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

মহামারির মধ্যে দরিদ্র বয়স্কদের সহায়তার জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১১২টি সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলায় বয়স্ক ভাতা চালু করে সরকার। গত বছর জুনে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরে দেশের আরও ১৫০টি উপজেলায় অতি উচ্চ দ্রারিদ্র্য ও উচ্চ দারিদ্র্যের গ্রুপের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য সবাইকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার নতুন উপজেলাগুলোতে সহায়তা কর্মসূচি বিস্তৃত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তারা মনে করে যে, এই ধরনের কর্মসূচিতে স্বচ্ছলরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। ফলে অন্যান্য অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো পর্যাপ্ত তহবিল থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬২ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ। এর মধ্যে দেশের সব উপজেলা থেকে মোট ৫৭ লাখ ১ হাজার মানুষ বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।

বিবিএসের সর্বশেষ দারিদ্র্য জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। মহামারিতে নতুন দরিদ্রদের বিবেচনায় নিলে, দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হতে পারে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

'তাই সরকার এই কর্মসূচির সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে', বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দিতে হবে বিবেচনা করে সরকারের এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হতে পারে।

'তবে তার আগে সরকারকে দরিদ্রদের একটি তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে, যা এখনো করা হয়নি। তালিকা না থাকলে বড় বড় কথা বলে কোনো লাভ হবে না', বলেন তিনি।

বয়স্ক ভাতা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের তালিকায় যদি স্বচ্ছল কারো নাম থেকে থাকে, তবে তা আগে বাদ দিতে হবে বলেও জানান এই অর্থনীতিবিদ।

তবে, অস্বচ্ছল-প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ সুবিধাভোগী এই উদ্যোগের আওতায় সহায়তা পাচ্ছেন। তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৩ লাখ ও মাসিক ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে।

একইভাবে, বর্তমানে দরিদ্র স্তন্যদানকারী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় ১০ লাখ ৪৫ হাজার সুবিধাভোগী থাকলেও আগামী ১ জুলাই থেকে তা বাড়িয়ে ১২ লাখ ৭৫ হাজার করা হবে।

অন্যান্য প্রধান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা আসন্ন জাতীয় বাজেটে বাড়ানোর সম্ভাবনা কম।

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার দরিদ্রদের সহায়তায় খাদ্য-ভিত্তিক একটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। ফলে দরিদ্ররা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই নতুন বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা করা হবে। চলতি অর্থবছরের এর পরিমাণ ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বেশি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে খরচ মোট দেশজ উৎপাদনের ৩ শতাংশের নিচে থাকবে। কারণ ২০১৫-২০১৬ সালের নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী, জিডিপির আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দ জাতীয় উৎপাদনের ৩ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বর্তমান মূল্যে জিডিপির আকার হবে ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছর অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা এবং নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Trade at centre stage between Dhaka, Doha

Looking to diversify trade and investments in a changed geopolitical atmosphere, Qatar and Bangladesh yesterday signed 10 deals, including agreements on cooperation on ports, and manpower employment and welfare.

54m ago