কাপড়ে অন্দরসজ্জায়

ঈদ মানেই নতুন ডেকোর। নতুন করে ঘর সাজানো। প্রতি ঈদে নতুন নতুন আসবাব কেনার সামর্থ্য হয় ক’জনার। তাই ঘরে যা আছে তাই দিয়েই চলে নন্দনসজ্জা।

ঈদ মানেই নতুন ডেকোর। নতুন করে ঘর সাজানো। প্রতি ঈদে নতুন নতুন আসবাব কেনার সামর্থ্য হয় ক’জনার। তাই ঘরে যা আছে তাই দিয়েই চলে নন্দনসজ্জা। ঘরজুড়ে আসবে মেহমান। সেখানে যতটা সম্ভব জাঁকজমক আর দৃষ্টিসুখকর করে ঘর সাজানোর চেষ্টা করে সবাই। বলা হয়, প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী। সেই হিসেবে অতিথি এসেই বসবেন যে ঘরে, সে ঘরের আসবাব হতে হয় আকর্ষণীয়। অন্তত আসবাব সজ্জা আকর্ষণীয় করতে পারলেও চলে। সেই হিসেবেই অবধারিতভাবে চলে সোফা আর পর্দার কথা। নিচের শতরঞ্জিটাকেও যদি হিসাবে ধরতে চান, তবে বলতেই হয়, ঘর সজ্জায় মনোযোগ দিন বুননে।
কম-বেশি সচ্ছল পরিবারগুলোর বসার ঘরের একটি প্রধান উপকরণ হলো সোফা। সেখানে আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, সোফাটি হতে হয় পরিপাটি, আরামদায়ক। রাজার হালে আয়েশ করতে রাজ সিংহাসনের মতো ভারী সোফার যুগ গেছে সেই কবে। এখন বরং হালকা এবং স্লিম আসবাবের জমানা এসেছে ফিরে। সেখানের কভার আর কুশনের সঙ্গে যদি পর্দার সম্মেলন করতে পারেন দৃষ্টিনন্দন, আপনার বসার ঘরের চেহারা বদলে যাবে নিমেষে।


যেকোনো রঙ ফোটানোর একটি প্রধান উপায় হলো কন্ট্রাস্ট করা। বসার ঘরের সোফার কুশনের রঙ কী হবে সেটা ঠিক করতে নজর দিন দেয়ালে। দেয়াল হালকা রঙের হলে অবশ্যই সোফার কাপড়ের রঙ হবে গাঢ়। দেয়াল যদি হালকা নীল হয়, তবে সোফাতে নীলের সঙ্গে ম্যাচ করে এমন রঙ ব্যবহার করতে পারেন। সেটা হতে পারে গাঢ় নীল, উজ্জ্বল কমলা কিংবা অফ হোয়াইটের সঙ্গে কম্বিনেশন করা কোনো নীল ধাঁচের ফুলের রঙ। ঘরের দেয়ালের রঙ হালকা হলুদ বা অফ বেজ কালারের হলে লালের কাছাকাছি শেডগুলো বেছে নিতে পারেন অনায়াসেই। সেটা হতে পারে কমলা, উজ্জ্বল বাসন্তী, হলুদ কিংবা গাঢ় বাদামি। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারও হতে পারে তার সঙ্গে ম্যাচ করা। কাপড়ের এবং ফোমের আরামদায়ক গদি আপনার ডাইনিংকে যেমন আরামদায়ক করবে, তেমনি অভিজাত করে তুলবে।
অনেকেই দেয়ালে পেইন্ট করে ভিজ্যুয়াল ড্রামা সৃষ্টি করেন। সেক্ষেত্রে বেশ নাটকীয় আবহ আসতেই পারে বসার ঘরের ইন্টেরিয়রে। ঘরের দেয়ালে সবুজ কিংবা হলুদ বা দুটোরই মিশেলের পেইন্টিং হলে সোফায় হতে পারে একরঙা ক্রিমসন রেডের কভার। ঘরের দেয়াল সাদা হলে কালে হয়তো ভালো লাগবে না, কিন্তু ভেলভেটের কোমলতায় ছড়ানো ছাই রঙ খারাপ লাগে না। ঘরের দেয়াল ঘন নীল বা বেগুনি হলো তো সোফার  কাপড়ের রঙ হবে উজ্জ্বল হলুদ।
এ তো গেল সোফার কাপড়ের কথা। আরেকটি প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো পর্দা। ঘরের আসবাব যতই দামি হোক, জানালার ম্যাড়মেড়ে পর্দা সব পরিশ্রমে পানি ঢেলে দিতে পারে। দেয়ালের রঙ আর সোফার কভার, যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন পর্দার রঙ মেলাতে। আমাদের দেশে চেকের পর্দা সব সময়ই জনপ্রিয়। সেক্ষেত্রে দেয়ালের রঙ গাঢ় হলে সেই রঙের হালকা শেডের পর্দা মেলাতে পারেন। তাতে দেয়ালের রঙের শেডের সঙ্গে মিলিয়ে চেক থাকলেই কেল্লা ফতে। দেয়ালের রঙ হালকা হলে পর্দার রঙও হালকা হলো ভালো। এতে করে ঘরের অন্য আসবাবগুলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
তবে পর্দার অবস্থান সোফার পেছনে হলে কখনোই সোফার সঙ্গে মিলিয়ে পর্দা দেবেন না। এতে করে সোফা ঢেকে যায় এবং দেখতে ভালো লাগে না। চেষ্টা করুন জানালা থেকে দূরে সোফা রাখতে। এতে করে সোফা বা দেয়াল, দুটোর সঙ্গেই ম্যাচ করা পর্দা ব্যবহার করতে পারবেন। আর সে ক্ষেত্রে সোফার পেছনের দেয়াল খালি না রেখে দু-একটা বড় ফ্রেমের হাতে আঁকা ছবি ঝুলিয়ে দিলে দারুণ লাগবে।
ঘরে কাপড় ব্যবহার করে নন্দনচর্চার আরেকটি বড় উপায় হলো বেড কভার। ঘুমানোর সময় আলো কম ব্যবহার করা ভালো অবশ্যই। কিন্তু সেটা তো রাতের বেলায়। দিনের বেলায় শোবার ঘর তো নিজের ব্যক্তিগত রুম, পড়ার রুম এমনকি মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবদের বসার রুমও হয়ে ওঠে। তাই বেডরুমের পর্দা, দেয়াল আর বেডকভার ব্যবহারে একটু কৌশল খাটালেই শোবার ঘরটি হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক।
মনে করুন, আপনি একটি ঝলমলে বেডরুম চান। তাহলে সিলিংটি সাদা রেখে দেয়াল অনায়াসেই লালের কোনো শেডে রাঙাতে পারেন। সেটা পিচও হতে পারে, আর গাঢ় বাদামির মিশেলেও হতে পারে। চাইলে হলুদও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিছানার কভার একটু বেজ কালারে যেমন গাঢ় ক্রিম রঙে নিয়ে আসুন। সঙ্গে ব্যবহার করুন প্রচুর কুশন এবং পিলো, রঙ হবে একটু সবুজ ঘেঁষা এবং কিছুটা ফ্লোরাল প্রিন্টের। জানালার সামনে টুকটুকে লাল একটি আরামদায়ক সিঙ্গেল সোফা বসিয়ে দিলেন বা প্রিয় রকিং চেয়ারটি। আর পর্দা হবে সাদা ও লালের মেশানো কোনো শেডের। অনেকেই বেডরুমে একটি ছোট্ট কফি টেবিল বা মোড়া রেখে দেন। সেটার ওপরে ব্যবহার করতে পারেন পর্দার সঙ্গে মেলানো কোনো ঢাকনি। আর হ্যাঁ, যদি চান আপনার বিছানায় কেউ না বসুক, অবশ্যই বিছানার সামনেই একটা নিচু লম্বা টুল পেতে দিন। সেটার গদি বানিয়ে দিতে পারেন লম্বা পিলোর আকারে। যাতে চাইলেই কুশনের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পাল্টে দেয়া যায়।
দেয়ালের রঙ সাদা হলে শুধু কাপড় দিয়েই নানা ধরনের কন্ট্রাস্ট করে ঘরের চেহারা পাল্টে দেয়া যায়। কক্ষটি আপনার শোবার ঘর হলে বিছানার কভার ও কুশন সাদায় সাজিয়ে ফেলুন। বেডসাইড টেবিল ল্যাম্পটার শেডও সাদা করতে পারেন। এবার পুরো ঘরে শুধু একটি উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করুন। যেমন- কমলার কোনো শেড। একটি কুশন বা পিলো রাখুন কমলা রঙের, সাদার সঙ্গে মেলানো। জানালায় গাঢ় বাদামি রঙের চিক ব্যবহার করতে পারেন। আর গায়ে দেয়ার কাঁথা বা কভারটি হবে উজ্জ্বল কমলার। এভাবেই গোলাপি বা মেরুনের ব্যবহারও করতে পারেন অনায়াসে।
আসবাব কম হোক বা বেশি, ঘর সাজাতে কাপড়ের ব্যবহার সবাই করে। তাই আসবাবে সামর্থ্য না কুলালে, কিংবা এমনিতেই ইন্টেরিয়রের এক্সপেরিমেন্ট করতে কাপড়ের ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনতেই পারেন। এই ঈদেই করে ফেলুন এমন একটি এক্সপেরিমেন্ট। ঠকবেন না, এটুকু নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
 খালেদা লাবনী
ছবি : আনন্দধারা

 

Comments