পাইলস কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

পাইলস
ছবি: সংগৃহীত

মলদ্বারের যেকোনো সমস্যাকেই অনেকে পাইলস মনে করেন। এছাড়া পাইলস সম্পর্কে বেশিরভাগরই ধারণা অস্বচ্ছ এবং ভ্রান্ত। পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন কলোরেকটাল সার্জন ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।

পাইলস কী ও কেন হয়

অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক বলেন, পাইলস বা হেমোরয়েড বলতে বোঝায় মলদ্বারের ভেতরে ফুলে ওঠা রক্তের শিরার একটি মাংসপিণ্ড। এমন রক্তের শিরার মাংসপিণ্ড বা কুশন সব মানুষেরই রয়েছে। তাই প্রকৃত অর্থে পাইলস বা হেমোরয়েড তখনই বলা হয়, যখন এটি উপসর্গ সৃষ্টি করে। যেমন- মলদ্বারের বাইরে ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ড বা রক্ত যাওয়া।

প্রতিটি মানুষের তিনটি পাইলস বা কুশন রয়েছে। বড় পাইলসের মাঝখানে ছোট ছোট পাইলসও থাকতে পারে। মলত্যাগ করার সময় শিরাগুলো কিছুটা ঝুলে পড়ে এবং রক্ত ভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে এবং ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়।

৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের ভেতর পাইলস হওয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ২০ বছর বয়সের নিচে সাধারণত পাইলস খুব একটা দেখা যায় না। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ বেশি হয়।

মলদ্বারের যেকোনো রোগকেই পাইলস হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।

অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক বলেন, পাইলস কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু রোগের কারণে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেমন-

১. দীর্ঘদিনের কোষ্ঠাকাঠিন্য

২. ডায়রিয়া

৩. মলত্যাগের সময় বেশি চাপ দেওয়া

৪. অনিয়মিত পায়খানার অভ্যাস

এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে, যার জন্য পাইলস হতে পারে। যেমন-

১.    বংশগত কারণে পাইলস হতে পারে

২.   দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা

৩.  দীর্ঘ সময় গরমে থাকা

৪.    ভারী ওজন তোলা

৫.   গর্ভাবস্থা

৬.  আঁটসাঁট পোশাক পরা

৭.    হরমোনের প্রভাব

৮.  খাদ্যতালিকায় আঁশ জাতীয় খাবারের অভাব

পাইলসের ধরন ও লক্ষন

অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক বলেন, পাইলস ২ ধরনের হয়। যেমন-

১. বাহ্যিক পাইলস: মলদ্বারের বাইরে ফোলা থাকে। কিছুটা ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে।

২. অভ্যন্তরীণ পাইলস: অভ্যন্তরীণ পাইলস হলে কোনো ব্যথা থাকে না। মলত্যাগের শেষে রক্ত যায়। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় যায় আবার কখনো তীরের বেগে যায়। রক্ত যাওয়ার পর যদি বেশি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয় তাহলে এনাল ফিশার বা ক্যানসার হতে পারে। অতিরিক্ত রক্ত যাওয়ার কারণে রোগী রক্তশূণ্যতায় ভুগতে পারেন। মলদ্বারের বাইরে পাইলসটি ঝুলে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মলত্যাগ শেষে পাইলসটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যেতে পারে অথবা রোগী হাতে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দেন।

যখন পাইলসটিকে চাপ দিয়ে ভেতরে ঢুকানো যায় না তখন এটিকে চতুর্থ ডিগ্রী পাইলস বলে। রক্ত যাওয়া একটানা চলে না, প্রথমত বছরে এক বা দুই বার রক্ত যায় এরপর দুই মাস পরপর যায়। তারপর প্রতি মাসে রক্ত যায়। শেষে ঘন ঘন রক্ত যায় এবং রক্ত যাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়।

চিকিৎসা

পাইলস শনাক্ত করার জন্য প্রক্টোস্কোপি ও সিগময়ডস্কোপি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক বলেন, মলদ্বারের ভেতর এন্ডোস্কোপি যন্ত্র দিয়ে এ পরীক্ষা ব্যতীত কখনই সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়।

প্রাথমিকভাবে রোগীর মলদ্বার ও আশপাশের অংশ ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়, বাহ্যিক পাইলস বা ফুলে যাওয়া শিরা দেখা যায় কিনা সেটিও পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পাইলস শনাক্ত, ধরন এবং রোগের পরিস্থিতির জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

পাইলসের চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে রোগের ধরণ ও স্তরের উপর। ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ, ফোলা কমাতে ও কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর করতে সেই অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয় পাইলস রোগীকে।

একইসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন ও খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। পায়ুপথের যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রতিরোধ

১. পাইলস প্রতিরোধে সময়মত কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা করতে হবে।

২.  টয়লেটে বসে খবরের কাগজ, বই পড়ার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।

৩.  খাদ্যতালিকায় আঁশ জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন- ফল, সবজি, সালাদ খেতে হবে।

৪. প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

৫.  ভারী ওজন তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬.  দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে না থাকা।

৭.  অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ না থাকা।

 

Comments

The Daily Star  | English

G7 expresses support for Israel, calls Iran source of instability

Israel and Iran attacked each other for a fifth straight day on Tuesday

1h ago