অথচ গত বছর ক্রিকেটই ছাড়তে চেয়েছিলেন স্টার্ক!

পারফরম্যান্স হয়ে পড়েছিল বিবর্ণ। তার মাপের বোলারের যে হারে উইকেট পাওয়ার কথা, সে হারে পাচ্ছিলেন না। রানও দিচ্ছিলেন প্রচুর। তাকে ঘিরে সমালোচনা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল। তার সমালোচকদের তালিকাতে ছিলেন স্বদেশি পূর্বসূরি শেন ওয়ার্নও। বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার তারকা বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্কের কথা। যিনি নিজেকে খুঁজে পেয়ে শনিবার জিতেছেন দেশটির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাব অ্যালান বোর্ডার ট্রফি।
মাঠের বাইরেও কঠিন সময় কাটছিল স্টার্কের। তার বাবা লড়ছিলেন মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে। সব মিলিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে গিয়েছিলেন স্টার্ক। হারিয়ে ফেলেছিলেন মনের জোর। ফলে ক্রিকেট থেকে তার আগ্রহ সরে যেতে শুরু করেছিল। এক পর্যায়ে, এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছিলেন যে ক্রিকেটই ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি!
গত বছরের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ছন্দে ছিলেন না স্টার্ক। চার ম্যাচে ৪০.৭২ গড়ে মাত্র ১১ উইকেট দখল করেন তিনি। সেকারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। সিরিজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর মারা যান তার ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা। এরপর অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি স্টার্ক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ৬০ রান দিয়ে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য।
কিন্তু বছরের শেষভাগে জ্বলে ওঠেন স্টার্ক। গত বছর ডিসেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শেষ হওয়া অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে ঝরান আগুন। পাঁচ টেস্টের সবকটিতে খেলে তিনি শিকার করেন ১৯ উইকেট। পুরস্কারের জন্য বিবেচিত সময়ের মধ্যে তিন সংস্করণ মিলিয়ে তার দখল মোট ৪৩ উইকেট। তাতে মিচেল মার্শকে এক ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো পেয়েছেন বর্ষসেরার সম্মাননা।
অ্যালান বোর্ডার ট্রফি জয়ের পর নিজ দেশের গণমাধ্যম ফক্স স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টার্ক তুলে ধরেন সেই সব কঠিন দিনগুলোর স্মৃতি, 'অবশ্যই, গত বছরটা মাঠ ও মাঠের বাইরে কঠিন ছিল আমার জন্য। আমি যে ক্রিকেটটা খেলতে পছন্দ করি, সেটা সম্ভবত আমি খেলতে পারছিলাম না। আর কিছু কিছু সময়ে আমি ক্রিকেটই একদম খেলতে চাইছিলাম না।'
কিংবদন্তি ওয়ার্নের সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হলেও পাল্টা জবাব দেওয়ার কোনো বাসনা নেই তার, 'তার সঙ্গে আমি কোন ব্যাপারে কথা বলব বলে আপনারা চান? এটা আমাকে একটুও আগ্রহী করে না। তার নিজস্ব মতামত দেওয়ার অধিকার আছে।'
ছন্দ খুঁজে পাওয়ায় বর্তমানে নিজের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারার কথা জানান স্টার্ক, 'আমি সেভাবেই ক্রিকেট খেলছি, যেভাবে আমি খেলতে পছন্দ করি। আর আমার চারদিকে রয়েছে আমার পরিবারের সমর্থন। আমার কাছের কিছু বন্ধুদের সঙ্গে আমি ক্রিকেট খেলি। তাই আমি এখন যে অবস্থায় আছি, তা আমার জন্য আরামদায়ক।'
কেউ সমালোচনা করলে আগে মাথা ঘামাতেন স্টার্ক। তবে এখন আর সেসবে পাত্তা দেন না তিনি, 'আমার বিশ্বস্ত সঙ্গীদের বলয়ের বাইরের মন্তব্য নিয়ে মাথা না ঘামানোকে আমি নিজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বানিয়েছি। কয়েক বছর আগে (এসব কথায়) মনোযোগ দিতাম।'
বর্ষসেরা ক্রিকেটার হওয়ার পাশাপাশি বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের সম্মাননাও জিতেছেন স্টার্ক। তার স্ত্রী অ্যালিসা হিলি হয়েছেন মেয়েদের ওয়ানডেতে টানা তৃতীয়বারের মতো বর্ষসেরা। বাইরের কারও কথার চেয়ে জীবনসঙ্গী ও বন্ধুদের ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান স্টার্ক, 'আমার স্ত্রী সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে এবং আমার কয়েক জন বন্ধুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। তাই আমার সমালোচনা করার ক্ষেত্রে, আমার চারপাশে যারা আছে, তারা যথেষ্ট যোগ্য।'
২০০০ সাল থেকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত করে আসছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যালান বোর্ডার ট্রফির ২২ বছরের ইতিহাসে মাত্র পঞ্চম পেসার হিসেবে পুরস্কারটি জিতেছেন স্টার্ক। তার আগে প্যাট কামিন্স, মিচেল জনসন, ব্রেট লি ও গ্লেন ম্যাকগ্রা হয়েছেন বর্ষসেরা।
Comments