এবার ভারতকে হারাতে পারবে যুবারা?

বছর দুয়েক আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রমে আকবর আলির ট্রফি উঁচিয়ে ধরার ছবি তো কারোরই ভুলবার কথা না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে স্মরণীয় অর্জনগুলোর একটি এসেছিল ভারতকে হারিয়েই, যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবার সেই ভারতকে কোয়ার্টার ফাইনালে সামলাতে হবে রাকিবুল হাসানের দলের।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আজ (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অবশ্য বদলেছে প্রেক্ষাপট, বদলেছে দুই দলের বাস্তবতা। প্রতিটি যুব বিশ্বকাপে ভারত একদম আলাদা স্কোয়াড নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ আগের বিশ্বকাপের কিছু খেলোয়াড়কে ধরে রাখে। এবারও আগের বিশ্বকাপ খেলা তিন ক্রিকেটার আছেন বাংলাদেশ দলে। সেবার ফাইনালে খেলা বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল এবার দলের অধিনায়ক। পেসার তানজিম হাসান সাকিবও এবার থাকবেন দলের মূল ভূমিকায়।
আগেরবার বিশ্বকাপের আগে দারুণ প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ মিলেছিল, ফলও মিলেছিল কাপ জেতায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এই দলটির প্রস্তুতিতে পড়ে ভাটা। দলের সমন্বয় খুঁজতেই লেগে যায় অনেকটা সময়। বোলিং আক্রমণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে দেখে আগের বিশ্বকাপ দলের রাকিবুল, তানজিমকে নিয়ে আসা হয় এবারও।
অভিজ্ঞতা বাড়িয়েও শিরোপা ধরে রাখার মিশনে শুরুটা হয় হতাশায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মাত্র ৯৭ রানে অলআউট হয়ে যুবারা হারে বড় ব্যবধানে। পরের দুই ম্যাচে ফল এসেছে প্রত্যাশিতভাবেই। কানাডার বিপক্ষে ৮ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে রাকিবুলদের জয় আসে ৯ উইকেট। শেষ আটে পা রাখা নিয়ে সংশয় ছিল না। আসল খেলা শুরু বরং এখনই।
প্রতিপক্ষ ভারত আছে উড়ন্ত ছন্দে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আসর শুরুর পর আয়ারল্যান্ড ও উগান্ডাকে উড়িয়ে দেয় তারা। তবে গ্রুপ পর্বের মাঝেই অধিনায়ক ইয়াস দুলসহ কয়েকজন আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে। তাদের ছাড়াই অবশ্য উগান্ডার বিপক্ষে চারশো ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ে ৩২৬ রানে জেতে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালে অধিনায়ক দুল ফিরছেন বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের। জুনিয়র টাইগারদের সেমির পথেও বড় বাধা হতে পারেন তিনি।
বাংলাদেশের এবারের দলটির বড় চিন্তার কারণ হতে পারে নিজেদের ব্যাটিং। প্রান্তিক নওরোজ নাবিল আগের বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও ছিলেন। অভিজ্ঞতা থাকলেও তিনি নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না। ইফতেখার হোসেন কানাডার বিপক্ষে ফিফটি পেয়ছেন, মাহফিজুল ইসলাম আরব আমিরাতের বিপক্ষে রান করেছেন। বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তারা এখনো সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেননি। সেদিক থেকে মিডল অর্ডারে দলের মূল ভরসা আইচ মোল্লাহ।
আশিকুর রহমান, রিপন মন্ডল, তানজিম সাকিবদের সঙ্গে অধিনায়ক রাকিবুল মিলে বোলিং আক্রমণ জুতসই। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে বোলারদের বেশিরভাগই ব্যাট চালাতে পারেন। এই ম্যাচে তাদের ছোটখাটো সব অবদানই হতে পারে কার্যকর। ভারতকে আরেক দফা হারাতে হলে দল হিসেবে জ্বলে উঠার বিকল্প নেই।
অ্যান্টিগার উইকেটও বাংলাদেশের যুবাদের কিছুটা আশাবাদি করতে পারে। তুলনামূলক মন্থর ঘরানার উইকেটে দেশের কন্ডিশনের কিছুটা মিল খুঁজতে পারেন তারা। তবে প্রতিপক্ষ ভারত হওয়ায় সেই সুবিধা নিজেদের দিকে কতটা নিয়ে আসা যাবে সেই প্রশ্ন থাকছে।
সব মিলিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠতে হলে যুবাদের জয় করতে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
Comments