কব্জির ঝাঁকুনিতে অবিশ্বাস্য মোস্তাফিজ!

Mustafizur Rahman
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

উইকেটটা তার জন্য একদম আদর্শ। বল গ্রিপ করছে, থেমে আসছে ব্যাটে, উঁচু-নিচু হচ্ছে। মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ানদের কঠিন পরীক্ষাই দেওয়ার কথা। কিন্তু মোস্তাফিজ যা করে দেখালেন তা প্রত্যাশার মাত্রাও ছাড়িয়ে গেল। অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয়, বিস্ময়কর এসব শব্দেও যেন কমতি পড়ছে তার নৈপুণ্য। 

ম্যাচে কোন  উইকেট পাননি মোস্তাফিজ। অথচ বাংলাদেশের ১০ রানের জয়ে তিনিই তো করে দিলেন আসল তফাৎ। ৫৩ বলে ৫২ করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে পরিস্থিতি বলবে ৪ ওভারে মাত্র ৯, বিশেষ করে ১৯তম ওভারে মাত্র ১ রান দেওয়া 'ফিজই' সেরা। বাউন্ডারি তো নয়ই, তার ২৪ বলের কোনটি থেকেই একের বেশি রান বের করতে পারেনি অজিরা। 

ম্যাচ জিততে শেষ ৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার লাগত ৩৮ রান। হাতে ৭ উইকেট। এমনিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা সাদামাটা সমীকরণ। কিন্তু মিরপুরের মন্থর উইকেটে এই কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। সেটা যে এতটা কঠিন অজিদের ভাবনাতেও হয়ত ছিল না।

১২৭ রানের পুঁজি সামলাতে ৬ষ্ঠ ওভারে বল হাতে পান মোস্তাফিজ। দেন মাত্র ৩ রান। ১৩তম ওভারে এসে বেন ম্যাকডারমটের ক্যাচ শরিফুল ইসলাম না ছাড়লে প্রথম বলেই পেতে পারতেন উইকেট। উইকেট না পেলেও টি-টোয়েন্টিতে রান আটকে দেওয়ার আসল দাবি মিটিয়েছেন তাক লাগানো বোলিংয়ে। অজিদের ডানা মেলে উড়া থামিয়ে ওই ওভারে দেন মাত্র ১ রান।

তারপরই ওই শেষের ঝলক। মোস্তাফিজের ঝলকে শেষ চার ওভারে অজিদের নাগালে থাকা সমীকরণ পাহাড় হয়ে যাওয়া দেখেছে মিরপুরের বাইশ গজ। ১৭তম ওভারে অ্যালেক্স ক্যারি আর উইকেটে থিতু থাকা মিচেল মার্শকে নাচিয়ে দিলেন মাত্র ৪ রান। শরিফুলের পরের ওভারে মার্শ আউট হলেও ১২ রান চলে আসায় আশা টিকে ছিল অস্ট্রেলিয়ার।

১৯তম ওভারে সেই আশা ধূলিসাৎ একদম করলেন মোস্তাফিজ। ওই ওভার থেকে অজিরা নিতে পারল মাত্র ১ রান।  যেকোনো উইকেটে ম্যাচের ১৯তম মাত্র ১ রান দেওয়ার অতিমানবীয় ব্যাপার। ছয়টি বলই করলেন ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড। ব্যাটসম্যান বুঝতে পারছেন,  আসছে আরেকটি কাটার, হাতের  গ্রিপ দেখছেন তবু করতে পারছেন না কিছুই। অজিদের চূড়ান্ত অসহায়ত্বের এই ছবি দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে গেঁথে থাকার কথা অনেকদিন।

ওই ওভারের পরই খেলা মূলত শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ ওভারে শেখ মেহেদীকে পিটিয়ে ১১ রান নিলেও ২২ রান তুলার সমীকরণ মেলাতে পারেনি সফরকারীরা।

প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে কোটা পূরণ করে ২৩ রানে ধরেন ৩ শিকার। ওই ম্যাচ পর অজি দুই ক্রিকেটার মোজেজ হেনরিকস আর অ্যাস্টন অ্যাগার মাতেন মোস্তাফিজ বন্দনায়। হেনরিকসের মতে ২৪টা বলই স্লোয়ার-কাটার করা এমন বোলিং তিনি আগে দেখেননি। অ্যাগার বলেছিলেন স্লোয়ার বলে কব্জির সঙ্গে আঙুল কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজের এই বিশেষ দক্ষতা অবিশ্বাস্য। বিশ্ব ক্রিকেটেই তো বিরল!   

শুক্রবার তৃতীয় ম্যাচে সবটাই দেখা গেল আরও প্রবলভাবে। একের পর এক বল ঠিক জায়গায় ফেলা। ব্যাটসম্যানের মতিগতি বুঝে ক্রিজের ব্যবহার, প্রতিটি বলে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা আর বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল চোখ ধাঁধানো।

২০১৫ সালে ভারতকে কাবু করে বিশ্ব ক্রিকেট তোলপাড় করে আলোয় এসেছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। এরপর তার ঝলক দেখা গেছে আরও অনেকবার। তবে চোট আর পুরনো অস্ত্রের ধারহীনতায় মাঝে একটা সময় অধারাবাহিক হয়ে পড়েছিলেন। ছন্দে থাকা মোস্তাফিজ পুরনো অস্ত্রের সঙ্গে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বেলায় বল ভেতরে ঢোকানোর কৌশলও রপ্ত করেছেন অনেকটা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে মোস্তাফিজ জানান দিচ্ছেন তিনি আছেন সেরা অবস্থায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

US-China tariff war punishes Bangladesh

Bangladesh is one of those nations that face pressure from Washington to decouple their manufacturing industries from Chinese suppliers, according to officials familiar with trade negotiations.

13h ago