‘বাজবলের’ প্রভাব বদলে দিল ইংল্যান্ড দলকে

ইংল্যান্ড দল যে মন্ত্রবলে টেস্টে পেয়ে গেছে ভিন্ন ভাষা। পেয়ে যাচ্ছে চোখ ধাঁধানো এমনকি প্রায় অবিশ্বাস্য সব জয়।

সাধারণ ক্রিকেট দর্শকদের জন্য 'বাজবল' শব্দটা অচেনা লাগতে পারে। তবে গত কয়েকদিন ধরে যারা ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের খবরাখবর রেখেছেন তাদের হয়ত জানার কথা। ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের প্রধান কোচ ব্র্যান্ডন  ম্যাককালামের ডাকনাম 'বাজ' আর তার দর্শনের নাম 'বাজবল'। ইংল্যান্ড দল যে মন্ত্রবলে টেস্টে পেয়ে গেছে ভিন্ন ভাষা। পেয়ে যাচ্ছে চোখ ধাঁধানো এমনকি প্রায় অবিশ্বাস্য সব জয়।

গতকাল এজবাস্টনে ইংল্যান্ড গড়ে নতুন ইতিহাস। ভারতের দেওয়া ৩৭৮ রানের লক্ষ্য ৭৬.৪ ওভারে তাড়া করে জিতে নেয় তারা। নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে রান তাড়ার জয় তাদের এটিই।

টেস্ট ক্রিকেটে ৮ম সর্বোচ্চ ঘটনা। ১৪৫ বছরের টেস্টের ইতিহাসে একদিক থেকে প্রথম। এর আগে ৩৫০ রানের বেশি তাড়া এত কম ওভারে কেউ করতে পারেনি। ইংল্যান্ডের রানরেট ছিল ৪.৯৩। টেস্টের বাস্তবতায় তা চোখ কপালে তোলার মতন।

এর আগেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টেও দেখা গেছে একই স্টাইল। ট্রেন্ট ব্রিজে তারা ৫০ ওভারেই ২৯৯ তাড়া করেছিল ৫.৯৮ রান রেটে। হেডিংলিতে ২৯৬ রান তাড়া করে ৫.৫৪ রান রেটে।

তারাই টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দল যারা কীনা টানা চার ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে আড়াইশর বেশি রান টপকে ম্যাচ জিতে নেয়।

এর পুরো কৃতিত্বই দেওয়া হচ্ছে আগ্রাসী কোচ ম্যাককালাম আর অধিনায়ক বেন স্টোকসকে। কয়েকমাস আগেও টেস্টে চরম ভোগান্তিতে ছিল ইংল্যান্ড। জো রুট নিজে রান করলেও দলকে ঠিক জাগাতে পারছিলেন না। তিনি নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর ক্রিস সিলভারউডকে সরিয়ে ম্যাককালামকে নিয়ে আসে ইংল্যান্ড।

এরপর ভোজবাজির মতো বদলে যেতে থাকে সব। খেলোয়াড়ি জীবনে ম্যাককালাম ছিলেন ভয়ডরহীন। আগ্রাসী মেজাজে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চাইতেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ইংল্যান্ডের দায়িত্বে এসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই চালু করেন তার 'বাজবল' নীতি।

ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও ভাবনার জগতে আসে বিশাল বদল। সব কিছুই সম্ভব এমন মন্ত্রে দুর্বার হয়ে উঠে ইংল্যান্ড। এজবাস্টন টেস্টে প্রথম তিনদিনই দাপট ছিল ভারতের। প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের বিশাল লিড নিয়ে ফেলেছিল তারা। এমন পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার লোকের অভাব হওয়ার কথা। কিন্তু 'দ্য বাজ' বাজিমাত করে দেখিয়ে দেন অসম্ভবও এখন কতখানি সম্ভব।

শেষ দুদিনে ঘুরে দাঁড়িয়ে অন্যরকম এক গল্পই লিখে ফেলল ইংলিশরা। ৩৭৮ রান তাড়ায় নামলে আগের কোন সময় হলে দ্বিধাগ্রস্ত পথে কুঁকড়ে যেতেন অ্যালেক্স লিস - জ্যাক ক্রলির মতো ওপেনাররা। কিন্তু সেদিন ভারতের বিপক্ষে রান তাড়ায় দ্রুতগতির শুরুতে তারাই যেন গড়ে দেন সুর। এরপর জো রুট আর জনি বেয়ারস্টো মিলে যা করলেন তা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তেমন কিছুই যেন করার ছিল না ভারতের।

ম্যাককালাম নিজেও টেস্ট ক্রিকেটটা খেলতেন এমনই। ১৮৮ বলে ২০২, ১৩৪ বলে ১৯৫ - এরকম ইনিংস আছে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টেও করেছিলেন ৭৯ বলে ১৪৫। সেই ম্যাচে ৫৪  বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে নাম লেখান বিশ্বরেকর্ডে।

ম্যাককালামের ক্রিকেট দর্শনের সঙ্গে মিলে গেছে স্টোকসের অধিনায়কত্ব। স্টোকস নিজেও খুবই আগ্রাসী ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের প্রথাগত ঘরানার টেস্ট ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছেন তারা। মজার কথা হলো ম্যাককালাম তো নিউজিল্যান্ডেরই, স্টোকসও কিউই বংশোদ্ভূত। তার বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন সেদেশেই। বহু সংস্কৃতি আত্মীকরণের  ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটকে দিতে চলেছে নতুন ভাষা। হালের টি-টোয়েন্টির মশলা যোগ করে পাঁচদিনের ক্রিকেট হতে যাচ্ছে আরো অনেক রোমাঞ্চকর।

এমন ম্যাচ জিতে ইংলিশ কাপ্তান বেন স্টোকস ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই বার্তাই, 'ইংল্যান্ডে এখন যেভাবে টেস্ট খেলা হচ্ছে, এটা আমরা নতুন করে লিখছি। গত চার-পাঁচ সপ্তাহে আমরা যা পরিকল্পনা করেছি তা সামনে এগিয়ে নিতে চাই।'

'আমরা জানি টেস্ট ক্রিকেটকে আমরা নতুন প্রাণ দিতে যাচ্ছি। খুব কম সময়ে অনেক সমর্থন পেয়েছি, তা দুর্দান্ত। পরের প্রজন্মকে আমরা অনুপ্রাণিত করতে চাই। আমরা সমর্থন আনতে চাই। টেস্ট ক্রিকেটে ছাপ রাখতে চাই।'

Comments

The Daily Star  | English

Mercury hits 42.7°C in Chuadanga, season's highest

Chuadanga today recorded the highest temperature of this season at 42.7 degree Celsius

27m ago