টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে ফাইনালে ইতালি

দ্বিতীয়ার্ধে ফেদেরিকো কিয়েসার গোলে এগিয়ে গেল পাল্টা-আক্রমণ নির্ভর কৌশল বেছে নেওয়া ইতালি। শেষদিকে বদলি নামা আলভারো মোরাতার লক্ষ্যভেদে সমতায় ফিরল বল দখলে অনেক এগিয়ে থাকা স্পেন। নির্ধারিত সময়ের বাকি অংশে ও অতিরিক্ত সময়ে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেও তারা আর খুঁজে পেল না জালের দেখা। অন্যদিকে, রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা রক্ষণ জমাট রাখায় ম্যাচ গড়াল পেনাল্টি শ্যুটআউটে। স্নায়ুচাপ জয় করে সেখানে শেষ হাসি হেসে ইউরোর ফাইনালে পা রাখল তারা।
মঙ্গলবার রাতে আসরের প্রথম সেমিফাইনালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে স্পেনের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জিতেছে ইতালি। আগের ১২০ মিনিট মিলিয়ে খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়। তবে ম্যাচ জুড়ে আজ্জুরিদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো খেলা উপহার দেয় স্প্যানিশরা।
টাইব্রেকারে মানুয়েল লোকাতেল্লির প্রথম শট রুখে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। তবে এরপর আর কোনো ভুল করেনি ইতালি। একে একে আন্দ্রেয়া বেলোত্তি, লিওনার্দো বোনুচ্চি ও ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি বল জালে পাঠানোর পর জর্জিনহো উল্লাসে মাতান দলকে। অন্যদিকে, স্পেনের দানি ওলমো প্রথম শটটি উড়িয়ে মারেন। এরপর জেরার্দ মোরেনো ও থিয়াগো আলকানতারা সফল স্পট-কিক নিলেও মোরাতার বাজে শট আটকে দেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা।
শুরু থেকে বল পায়ে রেখে খেলতে থাকে স্পেন। তবে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে অনেক সময় লেগে যায় তাদের। লা রোহাদের পাসিং ফুটবলের বিপরীতে ইতালি রীতিমতো খাবি খায় আক্রমণ সাজাতে।
১৩তম মিনিটে মিডফিল্ডার পেদ্রির পাসে ডি-বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন ফরোয়ার্ড মিকেল ওইয়ারজাবাল। কিন্তু তার প্রথম ছোঁয়া বাজে হওয়ায় হাতছাড়া হয় স্পেনের সুযোগটি।
দুই মিনিট পর নিকোলো বারেল্লার পাস কেড়ে নিয়ে আক্রমণে ওঠেন ফরোয়ার্ড ফেরান তোরেস। জর্জিনহোকে এড়িয়ে তিনি যে শট নেন তা ইতালির গোলরক্ষক দোন্নারুমাকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি।
২১তম মিনিটে বল বিপদমুক্ত করতে গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক সিমোন। তখন এমারসন কাট-ব্যাক করেন মিডফিল্ডার বারেল্লাকে। তবে জাল ফাঁকা থাকলেও আয়মেরিক লাপোর্তকে পেরিয়ে ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে শট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি তিনি।
চার মিনিট পর দোন্নারুমার দক্ষতায় বেঁচে যায় ইতালি। উইঙ্গার ওলমোর প্রথম শট লিওনার্দো বোনুচ্চি ব্লকড করার পর আলগা বলে তার ফিরতি শট ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি।
৩৩তম মিনিটে ইতালির রক্ষণের ভুলের ফায়দা তুলতে পারেননি ওলমো। আশেপাশে বিকল্প থাকলেও উড়িয়ে মারেন তিনি। ছয় মিনিট পর স্পেনের আরেকটি গোছানো আক্রমণ সফলতা পায়নি ওইয়ারজাবালের লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ভাগ্য সহায় থাকলে গোল পেয়ে যেতে পারত ইতালি। ডি-বক্সের মধ্যে দুরূহ কোণ থেকে লেফট-ব্যাক এমারসনের শট বাধা পায় ক্রসবারে।
বিরতির পর খেলায় গতি আসে। স্পেনের পাশাপাশি ইতালিও মনোযোগী হয় আক্রমণে। ৫২তম মিনিটে ওইয়ারজাবালের পাসে সার্জিও বুসকেতসের শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়।
আট মিনিট পর গতিময় পাল্টা-আক্রমণে এগিয়ে যায় ইতালি। চিরো ইম্মোবিলের পাসে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। চলতি আসরে এটি তার দ্বিতীয় গোল।
৬৫তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত স্পেন। তবে কোকের হাওয়ায় ভাসানো ক্রসে অবিশ্বাস্যভাবে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন অরক্ষিত ওইয়ারজাবাল। তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত ইতালির। কিয়েসার পাসে ডি-বক্সের ভেতরে দমিনিকো বেরার্দির কোণাকুণি শট পা দিয়ে ঠেকান সিমোন। ৮০তম মিনিটে মাত্তেও পেসসিনার সোজাসুজি শটও লুফে নেন তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কোরলাইন ১-১ করে স্পেন। ওলমোর সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে ডি-বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে গোল করেন স্ট্রাইকার মোরাতা। আসরে এটি তার তৃতীয় গোল।
গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে লুইস এনরিকের দল। ইতালির রক্ষণে তারা চাপ বাড়ায়। তবে গোলের অবশ্য দেখা পায়নি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে পেদ্রির ফ্রি-কিক দোন্নারুমা ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার পর মার্কোস লরেন্তের শট প্রতিহত করেন বোনুচ্চি। দ্বিতীয়ার্ধে বেরার্দি সিমোনকে ফাঁকি দিলেও অফসাইডের কারণে গোল টেকেনি।
সবশেষে টাইব্রেকারে জিতে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ে ইতালি। ১৯৬৮ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা জয় থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে তারা। আগামী ১২ জুলাই একই ভেন্যুতে ফাইনালে ইংল্যান্ড ও ডেনমার্কের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জয়ী দলের মুখোমুখি হবে তারা।
Comments