ডেনমার্কের রূপকথার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবার ফাইনালে ইংল্যান্ড

নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিলেন ডেনমার্কের খেলোয়াড়রা। ইংল্যান্ডের মুহুর্মুহু আক্রমণের ঝাপটা সামাল দিতে তারা তৈরি করলেন দৃঢ় রক্ষণপ্রাচীর। বিশেষ করে, তাদের গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল দেখালেন চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স। একের পর এক দারুণ সব সেভ করে নজর কাড়লেন তিনি। তারপরও শেষরক্ষা হলো না।
অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে রেফারির প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে পাওয়া পেনাল্টি মিসের পর ফিরতি শটে হ্যারি কেইন বল জালে পাঠালে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতল ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও অভাবনীয় কায়দায় ঘুরে দাঁড়ানো ডেনমার্কের রূপকথার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে পা রাখল তারা।
বুধবার রাতে আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়।
প্রথমার্ধে মিকেল ড্যামসগার্ডের ফ্রি-কিকে পিছিয়ে পড়া ইংলিশরা বিরতির আগেই সমতায় ফেরে সিমন কারের আত্মঘাতী গোলে। এরপর অতিরিক্ত সময়ে তাদের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন অধিনায়ক কেইন। চলতি আসরে তার গোলসংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার।
আগামী রবিবার একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে ইউরোর ফাইনাল। বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ইতালির মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। অতীতে ইতালিয়ানরা একবারই এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছিল, ১৯৬৮ সালে। আর থ্রি লায়ন্সদের সামনে রয়েছে প্রথম শিরোপার হাতছানি।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল হওয়ায় নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা পায় ইংল্যান্ড। গ্যালারিতে তাদের ভক্ত-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি আরও উজ্জীবিত করে খেলোয়াড়দের। প্রথমার্ধে সমানে সমান লড়াই হলেও বাকি সময়ে তাদের প্রাধান্য ছিল স্পষ্ট। গোলমুখে ২০টি শট নিয়ে দশটি লক্ষ্যে রাখে তারা। কিন্তু স্মাইকেল নামক বাধায় বারবার প্রতিহত হতে হয় তাদের। সবিমিলিয়ে নয়টি সেভ করেন এই ডেনিশ গোলরক্ষক।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শুরু থেকেই জমে ওঠে দুই দলের লড়াই। ১৩তম মিনিটে রহিম স্টার্লিংয়ের শট পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি স্মাইকেলকে। তিন মিনিট পর পিয়েরে-এমিল হয়বিয়ার শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।
৩০তম মিনিটে এবারের ইউরোতে প্রথমবারের মতো গোল হজম করে ইংল্যান্ড। ড্যামসগার্ডের চোখ ধাঁধানো ফ্রি-কিকে বল জড়ায় জালে। তার আগেই অবশ্য একটি রেকর্ড গড়া হয়ে যায় পিকফোর্ডের। ম্যাচের ২৭তম মিনিটে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় গোল হজম না করার কীর্তি গড়েন তিনি। এতদিন এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন গর্ডন ব্যাঙ্কস। তিনি ১৯৬৬ সালে ৭২০ মিনিট জাল অক্ষত রেখেছিলেন।
৩৮তম মিনিটে ছয় গজের বক্সের ভেতর থেকে স্টার্লিংয়ের শট আটকে দেন স্মাইকেল। তবে পরের মিনিটেই সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। বুকায়ো সাকার ক্রস সরাতে গিয়ে নিজেদের জালে বল পাঠান কার।
ইউরোর ১৯৯২ আসরের চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে চেপে ধরে দ্বিতীয়ার্ধে তেতে ওঠে ইংল্যান্ড। ৫৫তম মিনিটে হ্যারি ম্যাগুইয়ারের হেড ফাঁকি দিতে পারেনি স্মাইকেলকে। ৬১তম মিনিটে লুক শয়ের ক্রস হয়বিয়ার গায়ে লেগে গোলপোস্টের সামান্য দূর দিয়ে চলে যায়। বাকি সময়ে আক্রমণের পসরা সাজিয়েও প্রতিপক্ষের দুর্গে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয় ইংলিশরা।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শুরুতেই কাইল ওয়াকারকে গোলবঞ্চিত করেন স্মাইকেল। ৯৮তম মিনিটে জ্যাক গ্রিলিশকেও হতাশ করেন তিনি। কিছুক্ষণ পরই আসে পেনাল্টির মুহূর্তটি। স্টার্লিং ডি-বক্সে জোয়াকিম মেয়লার বাধায় পড়ে গেলে স্পট-কিকের বাঁশি বাজানো হয়। তবে দুজনের মধ্যে সংস্পর্শ ছিল খুবই কম। ভিএআরের অবশ্য পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত।
১০৪তম মিনিটে স্পট-কিকও বাম দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন স্মাইকেল। কিন্তু ছুটে গিয়ে আলগা বল লক্ষ্যে পাঠান কেইন। পিছিয়ে পড়ার পর ডেনমার্ক খোলস ছেড়ে আক্রমণে মনোযোগী হলেও স্কোরলাইনে আর পরিবর্তন আনতে পারেনি। তবে প্রথম ম্যাচে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের মাঠেই অসুস্থ হয়ে বাইরে চলে যাওয়া ও গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ার শঙ্কা সামলে সেমি পর্যন্ত পৌঁছানোয় গর্বিত অনুভব করতেই পারে দলটি।
Comments