এএফসি কাপ থেকে বিদায় বসুন্ধরার

নকআউট পর্বে উঠতে হলে জিততেই হতো বসুন্ধরা কিংসকে। সে লক্ষ্যে শুরুটাও হয় দারুণ। প্রথমার্ধে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু এ অর্ধের শেষ মুহূর্তে বিতর্কিত এক একটি লাল কার্ডই বদলে দেয় ম্যাচের চিত্র। দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাটলেটিকো মোহনবাগান সমতায় ফিরে সব আশা শেষ করে দেয় বসুন্ধরার। এএফসি কাপের আন্ত-আঞ্চলিক সেমিফাইনালে ওঠে ভারতের দলটিই।
মালদ্বীপের মালেতে এএফসি কাপের 'ডি' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতের অ্যাটলেটিকো মোহনবাগানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।
তিন ম্যাচের কোনো ম্যাচ না হারলেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় বসুন্ধরাকে। একটি জয় ও দুটি ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৫। অন্যদিকে সমান ম্যাচে দুটি জয় ও একটি ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে জায়গা পায় মোহনবাগানই।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলতে থাকে বসুন্ধরা। এক পর্যায়ে বলের দখল ছিল ৬৯ শতাংশ। একের পর এক আক্রমণে ১৪তম মিনিটে এগিয়েও যেতে পারতো বসুন্ধরা। টানা তিনটি সেটপিসে মোহনবাগানকে চেপে ধরেছিল তারা। খালিদ শাফির ক্রস থেকে দারুণ হেড নিয়েছিলেন তপু বর্মণ। তবে তার হেড ব্লক করেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার। ফিরতি বলেও দারুণ ভলি করেছিলেন তপু। এবারও তা এবারও বাধা পায় মোহনবাগানের রক্ষণে।
ফিরতি বলেও সুযোগ ছিল বসুন্ধরার। ঘুরে আসে রাউল বাসেরার পায়ে। অসাধারণ এক চিপ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার একেবারে গোললাইন থেকে হেড দিয়ে ঠেকান মোহনবাগানের কার্ল ম্যাকহাউ। ফলে এগিয়ে যাওয়ার বড় দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের দলটির।
২৩তম মিনিটে রয় কৃষ্ণার বাই সাইকেল কিক অল্পের জন্য বারপোস্ট ঘেঁষে মিস না হলে এগিয়ে যেতে পারতো মোহনবাগানও। এর পাঁচ মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত গোল পায় বসুন্ধরা। রাউল রবিনহোর কাছ থেকে বল পেয়ে তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে জায়গা করে নিয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শটে প্রথম বার দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন জনাথন ফার্নান্দেজ।
৪০তম রয় কৃষ্ণার শট খালিদ শাফির পায়ে লেগে দিক বদলে লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছিল। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর ডেভিড উইলিয়ামসের দূরপাল্লার জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বড় ধাক্কা খায় বসুন্ধরা। উড়ে আসা বল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন সুশান্ত ত্রিপুরা। প্রতিপক্ষে এক খেলোয়াড় আসেন হেড দিতে। সংঘর্ষে আহত হন দুই খেলোয়াড়ই। তবে বল জেতায় সিদ্ধান্ত যায় ভারতীয় দলটির পক্ষে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ত্রিপুরাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই পেনাল্টি পেতে পারতো বসুন্ধরা। ডি-বক্সে লক্ষ্যের দিকে যাওয়া বল হাত দিয়ে ঠেকিয়েছিলেন মোহনবাগানের এক খেলোয়াড়। কিন্তু বসুন্ধরার আবেদন আমলে নেননি ওমানি রেফারি। তার পরের মিনিটে হাত দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে রবিনহোর মুখে মারলেও দিপক তাঙ্গরিকে শুধুমাত্র হলুদ কার্ড দেখান সেই রেফারি।
এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ নিয়ে নিয়ে মোহনবাগান। সে ধারায় ৬২তম মিনিটে গোল পায় দলটি। লিস্টন কোলাকুর কাটব্যাক থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে জালে পাঠান অস্ট্রেলিয়ান তারকা উইলিয়ামস। অবশ্য এর দুই মিনিট আগেই গোল হজম করতে পারতো বসুন্ধরা। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক শট করেছিলেন শুভাশিস বসু। সামনেই ছিলেন রয় কৃষ্ণা। অল্পের জন্য নাগাল না পেলে সে যাত্রা বেঁচে যায় বসুন্ধরা।
৭১তম মিনিটে কোলাকুর দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান জিকো। ৮৪তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো বসুন্ধরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, রবিনহোর শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে হতাশা বাড়ে দলটির। পরের মিনিটে অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যায় তারা। মানবির সিংয়ের শট বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষ দিকে মোহনবাগানের শিবিরে বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু গোল না হলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় দলটি।
Comments