গোল উৎসব করে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে ম্যান সিটি

ছবি: টুইটার

পাড়ার কোনো দলের সঙ্গে যেন খেলতে নেমেছিল ম্যানচেস্টার সিটি! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য দেখিয়ে স্পোর্টিং লিসবনকে একেবারে ছারখার করে দিল তারা। প্রথমার্ধে চারবার বল জালে পাঠিয়ে ম্যাচের ফল প্রায় নির্ধারণ করে দেওয়া সিটিজেনরা দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়াল আরও। প্রতিপক্ষের মাঠে গোল উৎসব করে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা এক পা দিয়ে রাখল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আসরের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে স্পোর্টিংকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাধারীদের পক্ষে জোড়া গোল করেন বার্নার্দো সিলভা। একবার করে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন রিয়াদ মাহরেজ, ফিল ফোডেন ও রহিম স্টার্লিং।

৬৪ শতাংশ সময়ে বল পায়ে রাখা সিটি গোলমুখে ১৬টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে পাঁচটি। বিপরীতে, ম্যাচ জুড়ে আক্রমণে সামলাতে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া স্পোর্টিং তিনটি শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। তাই গোলপোস্টে একেবারে অলস সময় কাটাতে হয় সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদারসনকে।

রেফারি খেলা শুরুর বাঁশি বাজানোর পর প্রথম কয়েকটি মিনিটে উজ্জীবিত ছিল পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং। গোছানো ফুটবলে আক্রমণ সাজিয়ে সিটির রক্ষণে ভীতি সৃষ্টির প্রয়াস ছিল তাদের মাঝে। কিন্তু উদ্দীপনা হাওয়ায় উবে গিয়ে হতাশা জেঁকে বসতে দেরি হয়নি। একের পর এক ভয়ঙ্কর সুন্দর সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিকদের কাঁপিয়ে দেয় ম্যান সিটি।

সপ্তম মিনিটে মাহরেজের গোলে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। ফোডেনের শট গোলরক্ষক আদান ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে দিলেও বাইলাইনের কাছে পেয়ে যান ডি ব্রুইন। তিনি খুঁজে নেন ডি-বক্সের মাঝে ফাঁকায় থাকা মাহরেজকে। মাটি থেকে উঠে আদান ফেরার আগেই অরক্ষিত জালে আলতো টোকায় বল ঠেলে দেন এই আলজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। শুরুতে অফসাইডে গোলটি বাতিল হলেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিলে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত।

স্পোর্টিংকে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সয়ে ওঠার সময় না দিয়ে ব্যবধান বাড়ান বার্নার্দো। ১৭তম মিনিটে সতীর্থের কর্নার থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের জোরালো গতির হাফ ভলিতে জাল কাঁপান তিনি। আদান কাছের পোস্টে থাকলেও শট ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না তার। ক্রসবারের নিচের দিকে লেগে বল পেরিয়ে যান গোললাইন।

ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত আরও আগেই। একাদশ মিনিটে স্টার্লিংয়ের ক্রসে জন স্টোনসের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই গোল হজমের পর ম্যাচে ফেরার তাগিদ দেখা যায় স্পোর্টিংয়ের মাঝে। সিটিজেনদের গোলমুখে শটও নেয় তারা। কিন্তু ৩২তম মিনিটে বিপদের মাত্রা বাড়ে তাদের। ডানদিকে পায়ের কারিকুরি দেখিয়ে মাহরেজ ক্রস ফেলেন ছয় গজের বক্সে। জটলার মধ্যে বল পেয়ে অনায়াসে নিশানা ভেদ করেন তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার ফোডেন।

৪৪তম মিনিটে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার বার্নার্দো নিজের দ্বিতীয় গোলটি করলে স্টেডিয়ামের অধিকাংশ অংশে নেমে আসে নীরবতা। কেবল সিটির খেলা দেখতে সফররত সমর্থকদের আনন্দধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। ম্যাচের বাকি সময়ের পুরোটায় চলেছে তাদের উৎসব। নিজেদের অর্ধ থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ তৈরির পর ডি-বক্সে বল পান স্টার্লিং। তার পাসে বার্নার্দোর শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডি ব্রুইনের দূরপাল্লার শট ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। বিরতির পর ম্যাচের ৪৯তম মিনিটে আবার গোল করেছিলেন বার্নার্দো। নিজ দেশের দলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের উল্লাসও করে ফেলেছিলেন তিনি। তবে অফসাইডের কারণে গোলটি টেকেনি। এই আক্ষেপ ঝেড়ে নয় মিনিট পরই স্কোরলাইন ৫-০ করেন স্টার্লিং। বার্নার্দোর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে আদানকে পরাস্ত করেন এই ইংলিশ তারকা।

আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখা যায় সিটির মাঝে। তবে রীতিমতো অসহায় পড়া স্পোর্টিংয়ের রক্ষণে নিয়মিত বিরতিতে হানা দিতে থাকে তারা। ৮০তম মিনিটে আরেকটি গোল পেতে পারত তারা। মাহরেজের ক্রস সেবাস্তিয়ান কোয়াতেসের গায়ে লেগে একটুর জন্য জালে ঢোকেনি।

আগামী ১০ মার্চ শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে খেলতে নামবে স্পোর্টিং। তবে এই ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হারার পর ভীষণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে অবিশ্বাস্য কিছু ঘটানোর সম্ভাবনা তাদের নেই বললেই চলে।

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

13h ago