সালতামামী ২০২১

মেসির স্বপ্ন পূরণ, ইতালির প্রত্যাবর্তন, রোনালদোর চূড়ায় আরোহণ

সম্ভবত ফুটবলের সবচেয়ে ঠাসা সূচিতে পূর্ণ একটি বছর কাটল ২০২১ সালে। দুটি মহাদেশীয় কাপের সঙ্গে অলিম্পিক ফুটবল। ঘরোয়া ফুটবল তো ছিলই। কোয়ারেন্টিন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জই পার করলেন ফুটবলাররা।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এলোমেলো ফুটবল অঙ্গন। তবে সম্ভবত ফুটবলের সবচেয়ে ঠাসা সূচিতে পূর্ণ একটি বছর কাটল ২০২১ সালে। দুটি মহাদেশীয় কাপের সঙ্গে অলিম্পিক ফুটবল। ঘরোয়া ফুটবল তো ছিলই। কোয়ারেন্টিন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জই পার করলেন ফুটবলাররা। সবচেয়ে সাড়া জাগানো ঘটনা ছিল লিওনেল মেসির আন্তর্জাতিক শিরোপা স্বাদ পাওয়া। হঠাৎই হারিয়ে যাওয়া ইতালির ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মধ্য দিয়ে ফিরে আসাও কম আলোচনার সৃষ্টি করেনি। সঙ্গে দুই মহাতারকার দল বদল। নিজের 'ঘর' বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে পা দিলেন মেসি। অন্যদিকে জুভেন্টাস ছেড়ে 'ঘর' ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। চলতি বছরটা সত্যিকার অর্থেই যেন রোমাঞ্চকর ছিল ফুটবল ভক্তদের জন্য। পাঠকদের সে সকল ঘটনা মনে করিয়ে দিতে দ্য ডেইলি স্টারের এই ক্ষুদ্র চেষ্টা।

উত্থানের আগেই পতন বিতর্কিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগের

কিছুটা গুঞ্জন থাকলেও অনেকটা বোমা ফাটানোর আবির্ভাব হয় ইউরোপিয়ান সুপার লিগের। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে ফুটবলে চলতি বছরে এটাই ছিল প্রথম আলোচিত ঘটনা। এই 'বিদ্রোহী লিগে' যোগ দেয় ইউরোপের অভিজাত ১২টি ক্লাব। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ছয় ক্লাব লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল ও টটেনহ্যামের সঙ্গে সিরিআর তিন ক্লাব এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাস এবং লা লিগার তিন ক্লাব অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা এই লোভনীয় লিগের প্রস্তাব লুফে নেয়। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ফিফাও এ সিদ্ধান্তে বড় নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। ক্ষেপে ওঠেন ক্লাবগুলোর সমর্থকরাও। তাতে একে একে সরে যায় ইংলিশ ছয়টি ক্লাব সহ দুই মিলান ও অ্যাতলেতিকো। শেষ পর্যন্ত রিয়াল, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস নিজেদের জায়গায় অনড় থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি এ লিগ। ফলে দুই দিনেই সাঙ্গ হয় এ রঙ্গের।

আক্ষেপের ইতি ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক শিরোপায় উদ্ভাসিত মেসি 

বার্সেলোনার হয়ে এমন কোনো শিরোপা নেই যে একাধিকবার জিতেননি। ক্লাব পর্যায়ে ভুরিভুরি শিরোপা জিতলেও একটা জায়গায় আটকে ছিলেন লিওনেল মেসি। আন্তর্জাতিক শিরোপা যে নেই তার। তিন তিনটি কোপা আমেরিকার ফাইনালের সঙ্গে একটি বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। সে ব্যর্থতার অবসান অবশেষে হয়েছে। চলতি বছরের কোপা আমেরিকা জিতে নিয়েছেন মেসি। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনার দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশাও মিটেছে। ২৮ বছর পর ফের শিরোপার দেখা মিলেছে দলটির।

কলোম্বিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে কোপা আমেরিকার আয়োজক দেশ ছিল আর্জেন্টিনাই। তাতেই প্রত্যাশা ছিল অন্তত ঘরের মাঠে অধরা শিরোপাটা ছুঁয়ে দেখা হবে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মাঠে। যে দেশটি থেকে শিরোপা জয় করে ফেরা ছিল যে অলীক স্বপ্ন। ফিকে হয়ে যাওয়া সে স্বপ্ন পূরণ করেন অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়েই। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই অসাধারণ খেলেছেন মেসি। গোল্ডেন বলের পাশাপাশি জিতেছেন গোল্ডেন বলও। মারাকানাতেই ঘোচান আক্ষেপ।

ইতালির ফিরে আসা

চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তারা। অথচ সেই দলটিই কি-না জায়গা পেল না রাশিয়া বিশ্বকাপে। গেল গেল রবটা তখনই উঠেছিল। ভঙ্গুর দলটার দায়িত্ব তখন পিয়েরো ভেঞ্চুরার কাছ থেকে নেন রোবার্তো মানচিনি। দায়িত্ব পেয়েই দলকে রাতারাতি বদলে দেন তিনি। একের পর এক বড় জয়। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। গ্রুপ পর্বে ওয়েলস, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ককে হারিয়ে নকআউট পর্বে উঠে একে একে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও স্পেনকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় ফাইনালে। সেখানে আরেক ফেভারিট ইংল্যান্ডও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। টাই-ব্রেকারে জয় পায় ইতালিয়ানরাই।

ব্রাজিলের ফের অলিম্পিক সোনা জয়

পাঁচ বছর আগেও অলিম্পিক সোনা অধরা ছিল ব্রাজিলের। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে সে আক্ষেপ ঘুচিয়েছিলেন নেইমাররা। সেবার ফাইনালে জার্মানিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে অলিম্পিক সোনা জয় করেছিল দলটি। সে ধারায় এবার টোকিও অলিম্পিকেও ফুটবলে সোনা জিতেছে তারা। ফাইনালে স্পেনকে ২-১ গোলের ব্যবধানে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিকের মুকুট ধরে রাখে ফুটবলের অন্যতম শক্তিধর দলটি।

মাঠেই লুটিয়ে পড়া এরিকসেনের সুস্থ হয়ে ওঠা

এবারের ইউরোতে পুরো ফুটবল বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ডেনিশ ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে আচমকা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে জানা যায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। পরে তার শরীরে 'হার্ট স্টার্টার' বসানোর অপারেশন সফল হলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। মাঠে সতীর্থদের সহযোগিতায় মেডিকেল টিম যেভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়েছে সেই দৃশ্যও শিহরিত করেছে ফুটবল বিশ্বকে। হাসপাতালে গিয়ে সতীর্থদের অনুরোধ করেছিলেন ম্যাচটি খেলতে। যদিও সে ম্যাচটি ফিনল্যান্ডের কাছে তারা হারে ১-০ গোলে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন এরিকসেন। হয়তো ফুটবলেও ফিরবেন। ইন্টার মিলান তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলেও নিজের পুরনো ক্লাব বোল্ডক্লুবের হয়ে অনুশীলনে ফিরেছিলেন তিনি।

জুভেন্টাসের টানা ৯ বছরের দর্প চূর্ণ করে ইন্টার মিলানের ট্রফি উদযাপন

সিরিআর শিরোপা মানেই জুভেন্টাস। গত নয় বছর ধরেই এ ধারা চলছিল। সেই ধারা অবশেষে ভেঙেছে ইন্টার মিলান। মৌসুমের শুরুতেই পথ হারানো দলটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়াও কঠিন হয়ে গিয়েছিল দলটির। শেষ তিন ম্যাচের টানা জয়ে কোনোমতে চতুর্থ হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিশ্চিত করে তুরিনের ক্লাবটি। অথচ ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ২০১৮ সালে ফুটবলের অন্যতম মহা তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে দলে ভেরায় জুভেন্টাস। উদ্দেশ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো কিছু করার। উল্টো নিয়মিত শিরোপাই হাতছাড়া হয় দলটির।

পিএসজির দাপট খর্ব করে লিলের লিগ ওয়ান শিরোপা

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম খরুচে ক্লাব পিএসজি। কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে দল গড়েছে ক্লাবটি। তারকার উপস্থিতির কারণে লিগ ওয়ানের অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে ঢের শক্তিশালী ছিল তারা। কিন্তু তাদের হতাশায় ডুবিয়ে শুরু থেকেই পাল্লা দিতে থাকে লিল। এক সময় শীর্ষে চলে আসে তারা। যদিও এ লড়াই চলে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত। তবে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে লিলই।

সিটির শিরোপা পুনরুদ্ধার

২০১৯-২০ মৌসুমে লিভারপুলের দাপটের সামনে পাত্তা পায়নি ম্যানচেস্টার সিটি। তবে এক মৌসুম পরেই চেনা ছন্দে ফিরেছে গত এক দশকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল দলটি। আবারও লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে তারা। প্রায় একচ্ছত্র দাপট দেখিয়েই শিরোপা পুনরুদ্ধার করে দলটি। রানার্সআপ হওয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১২। সুযোগ ছিল ট্রেবল জয়েরও। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে চেলসির সঙ্গে পেরে ওঠেনি দলটি।

লেভানদভস্কির নৈপুণ্যে বায়ার্নের টানা নবম

জার্মান বুন্ডেসলিগায় বরাবরই বায়ার্ন মিউনিখের আধিপত্য। রবার্ট লেভানদভস্কির অসাধারণ নৈপুণ্যে এবারও লিগ শিরোপা জিতে নেয় তারা। টানা নবম শিরোপা জিতে মুকুট ধরে রাখে তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরবি লাইপজিগের চেয়ে ১২ পয়েন্ট বেশি পেয়ে লিগ শেষ করে দলটি। আসরে ২৯ ম্যাচ খেলে ৪১ গোল করে জার্ড মুলারের ৪৯ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙেন লেভা। জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু।

৭ বছর পর ফের লা লিগার শিরোপা অ্যাতলেতিকোর

লা লিগার শিরোপা মানেই যেন রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার রাজত্ব। সাত বছর পর সেই রাজত্বে ফের হানা দিয়েছে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। যদিও মৌসুমে জুড়ে ব্যর্থতার বৃত্তে পথ হারায় রিয়াল ও বার্সেলোনা। তাতেই এগিয়ে যায় অ্যাতলেতিকো। এক সময় তো মনে হয়েছিল বেশ কয়েক রাউন্ড আগেই লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করবে তারা। তবে পরে কয়েক ম্যাচ হোঁচটে লড়াই জমে ওঠে। শেষ দিকে বার্সেলোনাও পথ হারালে লড়াইটা ছিল রিয়ালের সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতে নেয় অ্যাতলেতিকো।

চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়

মৌসুমের শুরুতে টানা ব্যর্থতা। যে কারণে পরে কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে ছাঁটাই করে চেলসি। দায়িত্ব নিয়ে সেই দলটিকে আমূল পরিবর্তন করে দেন টমাস টুখেল। তখনও অবশ্য চেলসির হয়ে বাজী ধরার লোক তেমন ছিল না। কিন্তু সেই দলটি ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে জিতে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। নকআউট পর্বে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, পোর্তো ও রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় চেলসি। ফাইনালে ফেভারিটের তকমা পাওয়া স্বদেশী প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ব্লুজরা।

মেসির ঘর ছাড়া, রোনালদোর ঘরে ফেরা

পাগলাটে দল বদলে শুরু হয়ে এবারের মৌসুম। অথচ করোনাভাইরাসের কারণে এবার তেমন কোনো চমক দেখা যাবে না বলেই ধারণা ছিল সবার। সের্জিও রামোসের রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া দিয়ে শুরু হয়। এরপর পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় লিওনেল মেসির দল বদল। কোপা আমেরিকা জিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত এ তারকা গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে বার্সায় এসেছিলেন নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে। কিন্তু এসেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। লা লিগার আর্থিক নিয়মের বেড়াজালে চুক্তি আর করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্যারিসে তাঁবু ফেলেন এ মহাতারকা। আর মৌসুমের শেষ দিকে নাটকীয়তার জন্ম দেন আরেক মহাতারকা রোনালদো। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত ছিল তার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপট যায় পাল্টে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে আসেন পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী এ তারকা।

কিংবদন্তি জার্ড মুলারের চিরবিদায়

চলতি বছর ফুটবল বিশ্ব হারিয়েছে জার্মান কিংবদন্তি জার্ড মুলারকে। গত ১৫ আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমান তিনি। জার্মানির জার্সিতে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল। জার্মান লিগে সাতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা মুলার বায়ার্নের হয়ে গোল করেছেন ৫৬৬টি। জিতেছেন ১৯৭৪ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে তার গোলসংখ্যা ১৪টি। যা দীর্ঘদিন বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড হয়েছিল। পরে এ রেকর্ডটি ভাঙেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও।

রেকর্ড রাঙা বছর রোনালদোর

মৌসুমের শুরুতেই সাস্সুয়োলোর গোল করে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৭৫৯ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন রোনালদো। যদিও এ রেকর্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 'আরএসএসএসএফের হিসাব অনুযায়ী  সাবেক অস্ট্রিয়া ও তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার স্ট্রাইকার ইয়োসেফ বিকানের গোলসংখ্যা ৮০৫টি। সে রেকর্ডও ভাঙার পথে। ৮০৩ গোল বছর শেষ করেছেন তিনি। তবে ইউরোতে স্পর্শ করেন ইরানের কিংবদন্তি আলি দাই'র ১০৯ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড। আর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সে রেকর্ডটাকে নিজের করে নেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। এছাড়া ইউরোতে যৌথভাবে পাঁচ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার জিতে প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ (১৪) গোলের রেকর্ড গড়েন তিনি। একই সঙ্গে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ (২১) গোলের রেকর্ডটিও এখন তার দখলে।

মেসির সপ্তম ব্যালন ডি'অর জয়

দেশের হয়ে ট্রফি জিততে পারেননি। এই অভিযোগ এ বছরই খণ্ডন করেন মেসি। তখন থেকেই ধারণা ছিল ব্যালন ডি'অর এবার যাচ্ছে মেসির হাতেই। প্রত্যাশিতভাবে শেষ পর্যন্ত এ পুরষ্কার জিতে নেন এ আর্জেন্টাইন তারকাই। মর্যাদাপূর্ণ এ বর্ষসেরা পুরস্কারের সংখ্যাটি বেড়ে হলো সাত। যদিও দারুণ একটি মৌসুম কাটানোয় লড়াইয়ে ছিলেন রবার্ট লেভানদভস্কি। কিন্তু দলের হয়ে তেমন সাফল্য না পাওয়ায় পুরষ্কারটি যায় মেসির হাতেই।

চ্যাম্পিয়ন্সে লিগের ড্র নিয়ে বিতর্কে উয়েফা

তখন রীতিমতো উত্তাল ফুটবল পাড়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফের মুখোমুখি মেসি ও রোনালদো। কিন্তু সে উত্তাপ টিকে থাকেনি ঘণ্টা খানেকও। উয়েফা জানায় কারিগরি ত্রুটির জন্য বাতিল করা হয়েছে আগের ড্র। বছর শেষদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র নিয়ে বড় চমকই উপহার দেয় উয়েফা। আসরটির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বের ড্র হয় দুই দুইবার। শেষ পর্যন্ত মেসি প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে। আর রোনালদো পেয়েছেন প্রিয় প্রতিপক্ষ অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদকে।

আগুয়েরোর অশ্রুসিক্ত বিদায়

মাঝেমাঝে ফুটবল বড়ই নির্মম হয়ে ওঠে। ঠিক যেমনটা হয়েছে সের্জিও আগুয়েরোর ক্ষেত্রে। গত অক্টোবরে আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচে বুকে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। কে জাত সেটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। সে ব্যথাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনে ফুটবল ক্যারিয়ার আর দীর্ঘায়িত করতে পারলেন তিনি। ডিসেম্বরের মাঝে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে কান্নাভেজা কণ্ঠে ফুটবলকে বিদায় জানান এ আর্জেন্টাইন।

Comments