রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বার্সাকে হারিয়ে ফাইনালে রিয়াল

লড়াইটা হলো সমানে সমান। দুইবার পিছিয়ে পড়েও লড়াইয়ে ফিরেছিল বার্সেলোনা। তাতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেনি দলটি। বদলি খেলোয়াড় ফেদেরিকো ভালভার্দের গোলে জয় নিশ্চিত করে সুপারকোপার ফাইনালের টিকেট কেটেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
বুধবার রাতে রিয়াদের কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সুপারকোপা দি স্পেনিয়ার প্রথম সেমি-ফাইনালে বার্সেলোনাকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ভালভার্দে ছাড়া রিয়ালের হয়ে গোল পেয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও করিম বেনজেমা। বার্সেলোনার হয়ে গোলদুটি করেছেন লুক ডি ইয়ং ও আনসু ফাতি।
সমান তালে লড়াই হলেও এদিন আক্রমণে কিছুটা এগিয়ে ছিল বার্সেলোনাই। মাঝমাঠের দখলও ছিল তাদের বেশি। ৫৩ শতাংশ সময় বল পায়ে ছিল তাদের। শটও নেয় ২০টি, যার ৬টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ১৪ শটের ৮টি লক্ষ্যে রাখে রিয়াল।
এদিন ম্যাচের শুরুতে ডি-বক্সের থেকে শট নিয়ে বার্সাকে ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন করিম বেনজেমা, মার্কো আসেনসিওরা। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। ১২তম মিনিটে লুকা মদ্রিচের থ্রু পাস থেকে ভালো সুযোগ ভিনিসিয়ুস জুনিয়রেরও। তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুর্বল শট সহজেই লুফে নেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
১৯তম মিনিটে গোল করার প্রথম সুযোগ পায় রিয়ালই। পাল্টা আক্রমণ থেকে ভিনিসিয়ুসের বাড়ানো বল ধরে ফাঁকায় পেয়ে উড়িয়ে মারেন আসেনসিও। তবে ছয় মিনিট পরই সের্জিও বুসকেতসের ভুলে এগিয়ে যায় রিয়াল। মাঝ মাঠে তার কাছ থেকে বল কেড়ে ফাঁকায় থাকা ভিনিসিয়ুসকে পাস দেন বেনজেমা। এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এ ব্রাজিলিয়ান।
৩০তম মিনিটে সমতায় ফেরার ভালো সুযোগ ছিল বার্সেলোনার। উসমান দেম্বেলের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় হেড নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন লুক ডি ইয়ং। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত হেড নিতে পারেননি। গোলরক্ষক বরাবর হেড নিলে সহজেই তা ধরে ফেলেন থিবো কোর্তুয়া। দুই মিনিটে জর্দি আলবার ক্রস থেকে ফের ফাঁকায় থেকে হেড নেন লুক ডি ইয়ং। এবার তার দুর্বল হেড ঝাঁপিয়ে লুফে নেন রিয়াল গোলরক্ষক।
৩৮তম মিনিটে আসেনসিওর দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান বার্সা গোলরক্ষক স্টেগেন। দুই মিনিট পর দেম্বেলের ক্রস থেকে ফেরান তোরেস ভালো শট নিতে পারলে সমতায় ফিরতে পারতো বার্সা। তবে পরের মিনিটেই সমতায় ফেরে দলটি। বাঁ প্রান্ত থেকে দেম্বেলের কাটব্যাক ঠেকিয়েছিলেন এদের মিলিতাও। কিন্তু তার ঠিক সামনেই ছিলেন লুক ডি ইয়ং। বল তার পায়ে লেগে জালে প্রবেশ করলে গোল পেয়ে যায় কাতালানরা।
বিরতির পরপরই আক্রমণের ধার বাড়ায় বার্সা। এক মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যেতেও পারতো দলটি। আলবার বাড়ানো বলে অনেকটা ফাঁকায় থাকা দেম্বেলেকে দারুণ এক ব্যাক পাস দেন বদলি খেলোয়াড় পেদ্রি। কিন্তু তার শট লক্ষ্যেই থাকেনি। তিন মিনিট পর দেম্বেলের বাড়ানো বল থেকে দূরপাল্লার অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন পেদ্রি। তবে অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে দেম্বেলের শট থেকে লুক ডি ইয়ং ঠিকভাবে মাথা ছোঁয়াতে পারলেও এগিয়ে যেতে পারতো বার্সা।
৫৪তম মিনিটে বুসকেতসের ক্রস দানি কার্ভাহাল হেড দিয়ে ঠেকালে অনেকটা ফাঁকায় পেয়ে যান দেম্বেলে। কিন্তু তার কোণাকোণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৬৯তম মিনিটে দুর্ভাগা বেনজেমা। রদ্রির বাড়ানো বল ধরে এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে দারুণ এক শট নেন তিনি। কিন্তু তার শট গোলরক্ষক টের স্টেগেন কে পরাস্ত করতে পারলেও ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে।
তবে তিন মিনিট পরই গোল পেয়ে যান বেনজেমা। তার শট প্রথম দফায় দারুণ দক্ষতায় বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন ঠেকালে ডান প্রান্তে ফাঁকায় পেয়ে যান কার্ভাহাল। তার শটও ঠেকান স্টেগেন। কিন্তু আলগা বল অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে যান বেনজেমা। তার শট আর ঠেকাতে পারেননি স্টেগান। ফের এগিয়ে যায় রিয়াল।
৮৩তম মিনিটে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। আলবার নিখুঁত ক্রসে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি খেলোয়াড় আনসু ফাতি। তিন মিনিট দলকে এগিয়ে দিতে পারতেন দেম্বেলে। বদলি খেলোয়াড় মেমফিস ডিপাইয়ের বাড়ানো বল ফাঁকায় পেলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি তিনি।
নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২গলের সমতায় শেষ হলে গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তৃতীয় মিনিটে ছোট কর্নার থেকে দেম্বেলের ক্রস একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড দিয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি পেদ্রি। চার মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে উল্টো এগিয়ে যায় রিয়াল। রদ্রিগোর কাটব্যাক থেকে বল একেবারে ফাঁকায় পেয়ে দেখে শুনে সময় নিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন ভালভার্দে।
১০১তম মিনিটে তো অসাধারণ কোর্তুয়া। প্রথম দফায় বুসকেতসের জোরালো ঠেকান। ফিরতি বল থেকে নেওয়া দেম্বেলের শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। সাত মিনিট পর আব্দের দুরপ্ললার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে সমতায় ফিরতে পারতো বার্সা। তবে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও লক্ষ্য শট নিতে পারেননি রদ্রিগো। তবে তাতে ক্ষতি হয়নি তাদের। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দলটি।
Comments