ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়

লরেল হাবার্ড। ছবি: এএফপি

নিউজিল্যান্ডের ভারোত্তোলক লরেল হাবার্ড হতে যাচ্ছেন ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে প্রকাশ্যে খেলতে আসা অলিম্পিক ইতিহাসের প্রথম ক্রীড়াবিদ। সোমবার (বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে) অন্য নয় জন প্রতিযোগীর সঙ্গে টোকিওতে নারীদের ৮৭+ কেজির ওজন শ্রেণির ইভেন্টে অংশগ্রহণ করলে ইতিহাস গড়বেন তিনি।

রূপান্তরিত নারী হাবার্ড সাধারণত খুব কমই সাক্ষাৎকার দেন। তবে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমি অলিম্পিক গেমসকে আমাদের আশা, আদর্শ এবং মূল্যবোধের বৈশ্বিক উদযাপন হিসেবে দেখছি এবং খেলাধুলাকে সবার জন্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার প্রতিশ্রুতির জন্য আমি আইওসিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।'

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যে সকল ক্রীড়াবিদ পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়ে আইওসির অধীনে খেলায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাদের প্রমাণ করতে হয় যে, তারা তাদের টেস্টোস্টেরনের (পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন) মাত্রা প্রতি লিটারে ১০ ন্যানোমোলের নিচে নামিয়ে এনেছে এবং একইসঙ্গে প্রতিযোগিতার ১২ মাস আগে থেকেই তারা সেই মাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

আইওসির দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করা সত্ত্বেও হাবার্ডের অংশগ্রহণ একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে থাকছে।

ট্রান্স ক্রীড়াবিদরা তাদের প্রতিযোগিতায় অনিবার্যভাবে আধিপত্য বিস্তার করে থাকেন বলে সমালোচকদের তরফ থেকে প্রায়ই অভিযোগ এসে থাকে। কিছু সমালোচক অবশ্য যুক্তি দিয়ে বলে থাকেন যে, ১০ ন্যানোমোলের মাত্রা নির্ধারণ করা যথার্থ নয় কারণ, বেশিরভাগ নারী ক্রীড়াবিদ সচরাচর এক থেকে পাঁচ ন্যানোমোলের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা (প্রতি লিটারে) নিবন্ধন করে থাকে। তবে কেউ কেউ অনুপাতের এ মাত্রা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পূর্বে মাত্রা বজায় রাখার সময়সীমা এক থেকে দুই বছর কিংবা তার অধিক বাড়ানোর পক্ষপাতী।

আইওসির চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক পরিচালক রিচার্ড বাজেট এ ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'পুরুষ বয়সন্ধির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর তাদের (ট্রান্স নারীদের) খেলায় অধিক সুবিধা আদায়ের বিষয়টা নিয়ে এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা চলছে, কিন্তু রুপান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের অন্যান্য সমস্ত অসুবিধার কথাও আমাদের ভাবতে হবে।'

'জৈবিক যৌনতা'-এর প্রস্তাবিত বৈশিষ্ট্যগুলি, যেমন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ও হাড়ের ঘনত্ব, এখন অবধি পরিষ্কার নয়। এ ক্ষেত্রে বাজেট যোগ করেছেন, 'অভিজাত প্রদর্শনীর বিকাশে অবদান রাখতে শারীরবৃত্তীয় অনেকগুলো দিক রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে মানসিক দিকটাও কত অবদান রাখতে পারে তা বলা খুব কঠিন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ বয়সন্ধির মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে তার (হাবার্ড) একটি সুবিধা থাকতেও পারে।'

'কিন্তু পুরো ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। আমার মতে, ক্রীড়াবিভাগগুলো প্রতিটি নির্দিষ্ট খেলাধুলার শারীরিক মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে তাদের নিজস্ব নিয়মনীতির মূল্যায়ন করতে পারে, যেন তারা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও প্রত্যেক খেলোয়াড়ের (নারী, পুরুষ বা ট্রান্স) অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারে।'

অলিম্পিক গেমস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসা হাবার্ডের সাহস ও দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন বাজেট।

৪৩ বছর বয়সী রূপান্তরিত নারী হাবার্ড ১৯৯৮ সালে পুরুষদের ১০৫+ কেজি ভারোত্তোলনে নিউজিল্যান্ডের জুনিয়র রেকর্ড ভেঙে সবার নজর কেড়েছিলেন। ২০১২ সালে রুপান্তর প্রক্রিয়া সমাপ্তির পর তিনি ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। পরের বছর ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেওয়ার সময় হাত ভেঙে ফেলেন তিনি। তবে এদিন অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম প্রকাশ্যে খেলতে নামা ট্রান্স নারী হওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে তার। এবারের আসরে তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সী ভারোত্তোলক।

নিউজিল্যানডের জনগণ তাকে যে পরিমাণ সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দেখিয়েছে, সেজন্য হাবার্ড ইতিপূর্বেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

অ্যালানা স্মিথ। ছবি: রয়টার্স

টোকিওতে এবারের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে এলজিবিটিকিউ+ অন্তর্ভুক্ত কমপক্ষে ১৭৯ জন সমকামী, উভয়কামী, ট্রান্সজেন্ডার, কুইয়ার এবং নন-বাইনারি ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছেন, যা ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। উল্লেখ্য, ২০০০ এথেন্স অলিম্পিকে সর্বপ্রথম ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

হাবার্ড ছাড়াও এবার আরো কয়েকজন ট্রান্স ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন কানাডা নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার ও তারকা খেলোয়াড় কুইন। তিনি অবশ্য নিজেকে নন-বাইনারি (সংক্ষেপে 'এনবি') হিসেবে চিহ্নিত করেন, অর্থাৎ নারী বা পুরুষ কোনোটাই তার 'লিঙ্গ পরিচয়' না। ইতোমধ্যে কুইনের (এটিই তার সম্পূর্ণ নাম) কানাডা কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে উঠেছে। সেখানে অলিম্পিক সোনা জয়ের লক্ষ্য পূরণ করার পথে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে তারা। গ্রুপ পর্বে খেলতে নেমে ইতিপূর্বে অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম প্রকাশ্যে খেলতে আসা এনবি ট্রান্স ক্রীড়াবিদ হয়ে গেছেন কুইন।

টোকিওতে যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন দুজন এনবি ট্রান্স ক্রীড়াবিদ। তারা হলেন স্ট্রিটবোর্ডিংয়ে অংশ নেওয়া অ্যালানা স্মিথ (হিট থেকে বাদ পড়েছেন) ও সাইক্লিস্ট চেলসি উলফ (রিজার্ভ দলে থাকা বিএমএক্স চালক)।

Comments

The Daily Star  | English

Inside the lives of ride-sharing drivers

On the bustling streets of Dhaka, where traffic moves like molasses and the air hangs heavy with exhaust fumes, a new breed of urban warriors has emerged.

13h ago