করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন যেভাবে

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির কারণে আমরা একটি কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছি। এ সময় একে অপরের পাশে না দাঁড়ালে সংকট মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আশেপাশের কেউ আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন-

  • করোনা রোগীর গায়ে হাত দিলে করোনা হয় না। বরং করোনা ছড়ায় ড্রপলেটের মাধ্যমে। একমাত্র তার হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় লালার ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। রোগীর নিঃসৃত ভাইরাস কণিকা শ্বাসনালীতে গেলেই কেবল সংক্রমণ সম্ভব। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে করোনা রোগীকে শারীরিকভাবে সাহায্য করলেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

তবে, করোনা রোগীকে শারীরিক সহায়তা দেওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আপনার কিংবা রোগীর নাকে বা মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার পর স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলুন। অতিমাত্রায় সতর্কতা হিসেবে পরিধেয় পোশাক ধুয়ে গোসল করে ফেলুন।

  • কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করে না। করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর হার দুই শতাংশের কম। বেশিরভাগ করোনা রোগী আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সময় মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। এতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এসময় রোগীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে সাহস যোগাতে হবে। পরিচিত কেউ আক্রান্ত হরে ফোনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে তাকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করুন।
  • করোনায় আক্রান্ত রোগীকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। অকারণে করোনা রোগীর ঘন ঘন অক্সিমিটার দিয়ে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ পর্যন্ত থাকলে ভয় হবেন না। বেশিক্ষণ মাস্ক পরিধান করে থাকলে সুস্থ মানুষের অক্সিজেন মাত্রাও কমে যেতে পারে।
  • আক্রান্ত না হলে আগাম ওষুধ বা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুদ করার প্রয়োজন নেই। তাতে সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ে এগুলোর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য সংকটর সৃষ্টি করে।
  • বাড়িতে করোনা রোগী না থাকলে মাস্ক পরার দরকার নেই। গৃহবন্দী জীবনে বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। তবুও, বাইরে অকারণে ঘোরাঘুরি না করে বরং বাড়িতে বাগান থাকলে সেখানে বা ছাদে একটু হাঁটুন ও শরীরচর্চা করুন। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। শরীরচর্চা করা বা নির্জন ছাদে হাঁটার সময় মাস্ক পরার দরকার নেই। আপনার রুমে, বাড়িতে, গাড়িতে বা আশেপাশে কেউ না থাকলে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজনে নেই।
  • বাইরে বের হলে দুই স্তরের ডাবল মাস্ক পরিধান করুন। ভিড় এড়িয়ে পাশের মানুষ থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সামাজিক অনুষ্ঠান, গণজমায়েত, বিনোদন কেন্দ্র, শপিং মল থেকে দূরে থাকুন। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • করোনা সংক্রমণ যখন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ঠিক তখন শ্রমজীবী মানুষ ও পশু খামারিদের কথা বিবেচনা করে বিধিনিষেধ এক সপ্তাহের জন্যে শিথিল করেছে সরকার। তবে, সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। বাজার বা দোকানের পরিবর্তে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার চেষ্টা করুন। কোরবানি দিতে ইচ্ছুকরা হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
  • করোনা সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে অবশ্যই প্রথমে পরামর্শের জন্যে নিকটবর্তী হাসপাতালে যাবেন। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে বেড না পেলেও আপনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
  • প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে করোনা উড়ে এসে আপনাকে আক্রান্ত করবে না। প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে সাবধানতা অবলম্বন করে বরং তাকে সাহায্য করুন। ওষুধ, খাবার সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ঘরের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ফোনে কথা বলে চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তার দরজায় রেখে আসতে পারেন।

করোনা রোগীকে সাহায্য করার সময় আতঙ্কিত না হয়ে ভাবুন চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কীভাবে অবিরাম করোনা রোগীকে সেবা দেওয়ার পরেও সুস্থ থাকেন। তাই আসুন, আতঙ্কিত না হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতির এই দুর্যোগময় সময় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করি।

লেখক: ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক, সংক্রামক রোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Chinmoy Das granted HC bail

He is expected to get released from the jail following the HC order unless the Appellate Division of SC does not stay the HC verdict, his lawyer says

22m ago