ত্বকের ক্যানসার ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা হতে পারে মৃত্যুর কারণ

ত্বকে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা সংক্রমণ। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত শরীরের কোনো স্থানের কোষ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্যানসার বলা হয়। প্রাথমিক আক্রান্ত স্থান যেটাই হোক না কেন, অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়াই সাধারণত ক্যানসারে মৃত্যুর কারণ।

আক্রান্ত স্থান থেকে শরীরের অন্যস্থানে ক্যানসারের বিস্তৃতি এবং কতোটা দ্রুত তা ছড়ায় তার ওপর আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার স্থায়িত্ব নির্ভর করে।

শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বকেও নানা ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ত্বকে নানা প্রকারের টিউমার হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের নেভাস, চেরি আঙ্গিওমা, সেবরিক কেরাটোসিস, লাইপোমা, ফাইব্রোমা, ছিস্ট, কেরাটো-একান্থমা, গ্রানুলোমা, লেন্টিগো ও ক্যানসারের কারণে সৃষ্ট টিউমার। আক্রান্ত কোষের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ত্বকের ক্যানসার তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো- বেসাল সেল, স্কোয়ামাস সেল ও ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা।

বেসাল সেল ও স্কোয়ামাস সেল থেকে উদ্ভূত ক্যানসার খুব বেশি মারাত্মক না হলেও ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ মানুষ ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এই রোগের কারণে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক শতাংশ মানুষ জীবনে অন্তত একবার এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা কী

ত্বকে মেলানোসাইট নামের এক ধরনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এটি হয়ে থাকে। ত্বকের ভেতর ও বাইরের স্তরের মাঝখানে এই কোষের অবস্থান। খুব দ্রুত এই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে।

কেন হয়

ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা কী কারণে হয়, তার সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে সূর্যরশ্মি, ত্বকের ধরন, বংশগত কারণ, বয়স ও ত্বকে তিলের সংখ্যার সঙ্গে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রতীয়মান। অতিরিক্ত ফর্সা এবং যাদের ত্বকে তিলের সংখ্যা বেশি, তাদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

কীভাবে বুঝবেন

ত্বকের কোনো স্থানে রঙ্গ পরিবর্তন, টিউমার, আকারে বাড়তে থাকা তিল, তিল থেকে রক্তপাত বা চুলকানি ইত্যাদির মতো অস্বাভাবিক নতুন পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা আকার ও আকৃতিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিকৃত হয়ে থাকে। এগুলো আকারে ৬ মিলিমিটারের বেশি, অমসৃণ এবং এতে একাধিক রঙের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

চিকিৎসা

প্রাথমিক সময়েই নির্ণয় করা সম্ভব হলে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই বললেই চলে। ছড়ানো বা বিস্তৃতির ওপর ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার মৃত্যু ঝুঁকি ও চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ভর করে থাকে।

সাধারণত শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাথমিক টিউমার অপসারণ করার পর অন্যান্য ক্যানসার চিকিৎসার মতো কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রতিরোধ

সূর্যালোক থেকে দূরে থাকুন। সূর্যালোকে বাইরে বের হলে ছাতা বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

শরীরে থাকা তিলগুলোর দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখুন। কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ত্বকের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে, যতো তাড়াতাড়ি ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা নির্ণয় করা যায় জীবনের ঝুঁকি ততোই কমে। দেরি করা মানেই মৃত্যু ডেকে আনা।

 

ডা. এম আর করিম রেজা ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Iran says taking measures to continue nuclear programme

"Plans for restarting (the facilities) have been prepared in advance, and our strategy is to ensure that production and services are not disrupted," said the head of the Atomic Energy Organization of Iran

35m ago