বয়সভেদে ডায়েট

ছবি: সংগৃহীত

ডায়েট শব্দটা শুনলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। অনেকে ভাবেন, ডায়েট মানেই ওজন কমানো। শব্দটা শুনলেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শশা, টমেটো, গাজরের সালাদ, কিংবা সেদ্ধ সবজি, মশলা ছাড়া খাবার।

আসলে কিন্তু তা নয়। ডায়েট মানেই কম খাওয়া, পছন্দের খাবার পুরোপুরি বাদ দেওয়া বা মন চাইলেও বিশেষ খাবার এড়িয়ে চলা নয়।

ডায়েট নিয়ে ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের উপপ্রধান পুষ্টিবিদ ফারজানা আনজিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেকেই মনে করেন ডায়েট মানেই ওজন কমানো। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, রোগের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে সুস্থ থাকার জন্য যে খাবার পরিকল্পনা করা হয় তাকেই বলা হয় ডায়েট৷ এই পরিকল্পিত খাবারকে যখন আবার সারাদিনে ৫ থেকে ৬ বারে ভাগ করে তালিকা করে দেওয়া হয় তাকেই বলা হয় ডায়েট চার্ট।'

প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন খাবারে সুষম পুষ্টি বজায় রাখা উচিৎ। ব্যক্তিভেদে খাবারের পরিমাণ আলাদা হলেও সেটা হবে তার একদিনের জন্য যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে কারো ডায়েটে খাবার কমাতে কিংবা বাড়াতে হতে পারে।

একজন মানুষের শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী ক্যালরি হিসাব করে খাদ্য তালিকা তৈরি করাই হচ্ছে মূলত ডায়েট। ক্যালরির হিসাবটি হয় বয়স, উচ্চতা, লিঙ্গ, শরীরের অবস্থা ও জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করে। ব্যক্তিভেদে শরীরের চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলে তার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার চাহিদার চেয়ে কম ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। পুরুষদের ক্ষেত্রে যা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ৩ হাজার ২০০ এবং ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের জন্য ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ ক্যালরি প্রয়োজন।

তবে এই পরিমাণ ব্যক্তিভেদে শারীরিক অবস্থা, প্রতিদিনের জীবনযাপনের ধরন, সারাদিনে পরিশ্রমের পরিমাণ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

বয়সভেদে একজন নারী বা পুরুষের শরীরের পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও ভিন্ন। একজন মেয়ের কৈশোরে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হয় এবং সেই সঙ্গে শারীরিক গঠনেও আসে নানা পরিবর্তন। এই সময় তার শরীরে বাড়তি আয়রন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তাই কৈশোরে মেয়েদের ডায়েটে সঠিক পরিমাণ আয়রন রাখা জরুরি।

আবার ২০ থেকে ৩০ বছর বা ৩০ উর্ধ্ব নারীর অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সঙ্গে বাড়তি ক্যালসিয়াম ও ফলিক এসিড প্রয়োজন হয়। এই সময় অনেক নারী মা হন বা মা হওয়ার প্রস্তুতি নেন। ফলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪০-৫০ বছর বয়সে সাধারণত নারীদের মেনোপজ হতে শুরু করে। এই সময় শরীরে আয়রনের অভাব হয় এবং বিপাক ক্রিয়াও ধীর হয়ে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সময় প্রয়োজনীয় আয়রন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৫০ উর্ধ্ব নারীদের ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজন হন। এ ছাড়া হাড়ক্ষয় হতে থাকায় তাদের জন্য বাড়তি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনও প্রয়োজন। মেনোপজের পরে যদি লিভার ম্যাগনেসিয়াম সঠিকভাবে শোষণ করতে সক্ষম না হয় তবে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণও প্রয়োজন।

একজন কর্মজীবী পুরুষের তার প্রতি কেজি ওজনের জন্য অন্তত ২৫ থেকে ৩০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হয়। তবে পরিশ্রম, শারীরিক কাঠামো, ওজন, উচ্চতা, বয়সভেদে এই হিসাবে কিছুটা ভিন্নতা আসতে পারে। সাধারণত পুরুষের জন্য ক্যালোরি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ হয়ে থাকে।

প্রতি কেজি ওজনের জন্য একজন পুরুষকে কমপক্ষে ১ থেকে ১ দশমিক ২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। পেটে সহ্য হলে রাতে ১ গ্লাস দুধ খাওয়া উচিত। এতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং ভবিষ্যতে হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

স্ট্রোক হওয়া, রক্তের কোলেস্টেরল ও ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়া এবং এসিডিটির অন্যতম কারণ বাইরের ফ্যাটি খাবার। তাই সুস্থ থাকতে বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে এবং ভালো চর্বি, যেমন তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, দুধ, ডিম খেতে হবে।

প্রতিদিনের খাবার গ্রহণের সময় এসব তথ্য মাথায় রাখলে সুস্থ, সবল ও প্রাণোজ্জ্বল জীবন ধারণ সম্ভব।

নুসরাত জাহান, পুষ্টিবিদ

Comments

The Daily Star  | English

Yunus must resolve all issues from his position: Nahid

Nahid also alleged that an effort is on to obstruct the country's democratic transition and create another 1/11-style settlement

20m ago