সঠিক খাদ্যাভ্যাসে ডেঙ্গু প্রতিরোধ

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

করোনা মহামারির মধ্যে এখন আতংকের নাম হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। সঠিক ওষুধের পাশাপাশি উপযুক্ত খাবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে খুবই জরুরি।

সুষম খাবার মানুষের শরীর থেকে দূষিত উপকরণ বের করে দিতে পারে, দেহে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পারে এবং একই সঙ্গে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল রক্তপাত ও পানিশূন্যতার মতো জটিল শারীরিক সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু সংক্রমণের তিন থেকে ১৪ দিন পর থেকে উপসর্গ দেখা দেয়। যার মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, পেশীতে ব্যথা অন্যতম। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ের পুষ্টি চিকিৎসার অংশ হিসেবে রোগীকে তরল খাবার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, কারণ সেগুলো দানাদার খাবারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহজে হজম হয়। কিছুক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে পানীয় পান করলে তা শরীরের হারানো পানি প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে তাপমাত্রাও কমিয়ে আনে।

ডেঙ্গু রোগীরা সেরে ওঠার পর সহজে হজম হয় এরকম খাবার, যেমন নরম খিচুড়ি, দই ও ভাত, সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ সবজি দেওয়া যেতে পারে।

লেবুর রস বা অন্যান্য ভেষজ উপকরণ ব্যবহার করে খাবারের স্বাদ বাড়ানো যেতে পারে। নরম খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তাজা ফলের রস, স্যুপ ও ডাবের পানি খাওয়া জরুরি। এতে শরীরে পানির পরিমাণ ও লবণের ভারসাম্য বজায় থাকে। পাকা কলা, পাকা পেঁপে, তরমুজের মতো ফল খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো- সব সময় পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের দেহে সাধারণত জটিল আকারের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ডাবের পানি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এটি পানিশুন্যতা দূর করে এবং এতে বিভিন্ন ধরণের খনিজ ও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। লেবু পানি ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। যা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।

অনেক ক্ষেত্রে আদা পানিও পান করতে বলা হয়। কারণ এটি বমি বমি ভাব দূর করে। কখনও কখনও শরীরে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে খাওয়ার স্যালাইন পান করতে বলা হয়। স্যালাইন শরীরে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পটাশিয়াম সরবরাহ করে।

প্ল্যাটিলেট বৃদ্ধি

ব্রকলি ভিটামিন কে এর একটি অসাধারণ উৎস, যা রক্তে প্ল্যাটিলেট তৈরিতে সহযোগিতা করে। যদি হঠাৎ করে প্লাটিলেট কমে যায়, তাহলে দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে ব্রকলি যোগ করা উচিৎ। এটি বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।

পালং শাক আয়রন, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের খুব ভালো উৎস। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এই খাবারটিও শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

ডালিম বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান ও খনিজে ভরপুর। এটি প্রয়োজনীয় শক্তি দেয় এবং ক্লান্ত ও ঝিমানো ভাব কমায়। আয়রনের একটি ভালো উৎস ডালিম। শরীরে প্লাটিলেটের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বৃদ্ধির জন্য এটি বিশেষ উপযোগী খাবার হিসেবে বিবেচিত।

আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পেঁপে পাতা খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও এর রয়েছে রোগ নিবারণের ক্ষমতা। এটি পাপাইন ও কাইমোপাপাইনের মতো এনজাইমে ভরপুর। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফুলে যাওয়াসহ অন্যান্য হজমের সমস্যা দূর করে। অনেক গবেষক জানিয়েছেন, পেঁপে পাতা ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়িয়ে।

গরুর দুধের পরিবর্তে ছাগলের দুধ খেলেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।

অন্যান্য 'পাওয়ার ফুড'

হলুদ একটি জীবাণুনাশক মশলা। এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়ায়। দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেলে ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।

মেথি খেলে ঘুম ভালো হয় এবং দেহের ব্যথা কমায়। এটি উঁচু মাত্রার জ্বর নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

কালো আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এবং এটি শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। পেয়ারা শরীরে প্লাটিলেট বাড়াতে পারে।

বিটের স্যুপে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন (বি নাইন, সি), খনিজ উপকরণ (ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন) থাকে এবং এগুলো রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।

টমেটো স্যুপেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম রয়েছে।

যেসব খাবার খাওয়া যাবে না

তেল ও মসলা যুক্ত এবং ভাজা খাবার, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত করা খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরণের খাবারে পেটে এসিড জমা হয়ে । যার ফলশ্রুতিতে আলসার হয়ে পরিপাকতন্ত্রের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to unveil 'July Declaration' on August 5

It will be presented in presence of all stakeholders involved in the mass uprising at 5:00pm

2h ago