জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩.০২ শতাংশ

​​​​​​​ জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) দেশের পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার বেশি।

জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) দেশের পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার বেশি।

পর্যটন নিয়ে বিবিএস কর্তৃক প্রথমবারের মতো প্রকাশিত প্রতিবেদন ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০ অনুসারে মোট কর্মসংস্থানের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের সুযোগ তৈরি করছে এই খাত।

প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।

প্রতিবেদনটিতে মূলত দেশের পর্যটন খাতের আর্থিক পরিমাপ, পর্যটন সম্পর্কিত পণ্য ও পরিষেবার সরবরাহ এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত উপাত্ত একীভূত হয়েছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতিগত সুপারিশ ব্যবহার করে।

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনটিতে দেশীয় পর্যটনের (ডোমেস্টিক ট্যুরিজম) পাশাপাশি বহির্গামী (আউটবাউন্ড) ও অন্তর্গামী (ইনবাউন্ড) পর্যটন কার্যক্রমের কাঠামো তুলে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এ ছাড়াও প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো দিয়ে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই শিল্পের খরচ ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য।'

দেশীয় পর্যটন

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশীয় পর্যটকরা পর্যটনের পেছনে আনুমানিক ৭৪ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪৪ দশমিক ৩০ শতাংশ পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে যে, তার গড়ে ২ দশমিক ৭২ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অন্তত ১টি দিনব্যাপী ভ্রমণে যাত্রা করেছে।

প্রায় ৬৪ দশমিক ১৪ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তারা ২ দশমিক ৫৬ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অন্তত ১ রাত ভ্রমণ করেছেন। এর গড় সময়কাল ৩ দশমিক ৪৬ রাত।

দিনব্যাপী ভ্রমণে যাত্রা করা দর্শনার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক ৪১ দশমিক ২৬ শতাংশ বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আরও ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশের ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রাপ্তি এবং ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ গিয়েছিলেন কেনাকাটার জন্য।

রাত্রি যাপন করা (৭৬ দশমিক ৭০ শতাংশ) বেশিরভাগ দর্শনার্থীও বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ চিকিৎসার জন্য এবং ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে, অবসর যাপন করতে ও বিনোদনের জন্য।

বেশিরভাগ (৯৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) দিনব্যাপী ভ্রমণ কোনো প্যাকেজের আওতায় ছিল না। একই অবস্থা ছিল রাত্রি যাপনের (৯৭ দশমিক ১৩ শতাংশ) ভ্রমণের ক্ষেত্রেও।

রাত্রি যাপন করা দর্শনার্থীদের বেশিরভাগ (৫২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ) যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বাস বেছে নেন। এ ছাড়া ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভাড়া করা পরিবহন ও শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ যাতায়াতের জন্য বিমান ব্যবহার করেন।

ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ দিনব্যাপী ভ্রমণ সংঘটিত হয় (১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ)। এর পরেই আছে আগস্ট (১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ) ও ফেব্রুয়ারি মাস (৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ)।

বছরের শেষ মাসে রাত্রি যাপন করে ভ্রমণের সংখ্যাও সর্বাধিক (১২ দশমিক ৬০ শতাংশ)। এর পরে আছে জুন (১০ দশমিক ৩০ শতাংশ) ও জানুয়ারি (৯ দশমিক ২৭ শতাংশ)।

দিনব্যাপী ভ্রমণের ক্ষেত্রে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে কেনাকাটার জন্য (৪৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ)। খরচের পরের খাতগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা।

রাত্রি যাপন করা ভ্রমণে খরচের পরিমাণ ৬১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে যাতায়াতের জন্য (৩৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ)। এর পরে আছে কেনাকাটা (১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা (১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ)।

জনপ্রতি দিনব্যাপী ভ্রমণের গড় খরচ ২ হাজার ২৬০ টাকা। বিপরীতে রাত্রি যাপন করা ভ্রমণের খরচ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭১ টাকা।

বহির্গামী পর্যটন

অনুমান করা হচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ২৯ লাখ ২১ হাজার বাংলাদেশি বিদেশ সফরে গিয়েছেন।

প্রতিটি সফরে গড় অংশগ্রহণকারী ছিল ১ দশমিক ৮৭ জন। সময়কাল ছিল ৫ দশমিক ৭৬ রাত।

এর মধ্যে বেশিরভাগ দর্শনার্থী (৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ) ভারত ভ্রমণ করেছেন। এর পরে আছে সৌদি আরব (৮ দশমিক ১২ শতাংশ) ও মালয়েশিয়া (৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ)।

ভ্রমণকারীদের ৪৫ দশমিক ১১ শতাংশ বিদেশে যান বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে, ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ যান চিকিৎসার জন্য এবং ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ যান ছুটি কাটাতে বা অবসর যাপনের জন্য।

বহির্গামী পর্যটনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ভ্রমণকারী ঢাকা বিভাগের। এর পরে আছে খুলনা (১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ) ও সিলেট (১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ)।  এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে সবচেয়ে কম সংখ্যক (শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ) দর্শনার্থী বিদেশে যান।

বহির্গামী পর্যটনের জন্য খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে ভ্রমণপূর্ণ ব্যয় নির্বাহের জন্য।

বহির্গামী পর্যটকরা বেশি খরচ করেছেন চিকিৎসার জন্য (২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ)। খরচের পরের খাতগুলো হচ্ছে যাতায়াত (২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ) ও কেনাকাটা (২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ)।

অন্তর্গামী পর্যটন

২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১৬ লাখ ৪ হাজার পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকিরা বিদেশি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ (৭২ শতাংশ) উড়োজাহাজে এসেছেন, বাকিরা এসেছেন স্থলপথে।

এই পর্যটকরা তাদের খরচের বেশিরভাগ (২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ) নির্বাহ করেছেন খাদ্য ও পানীয়র জন্য। এর পরে আছে থাকার (১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ) ও সড়ক পথে যাতায়াতের (১৭ দশমিক ৪ শতাংশ) খরচ।

সব মিলিয়ে অন্তর্গামী পর্যটনে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগ (৮২ দশমিক ৩৮ শতাংশ) খরচ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

The deadline for completion of the Rooppur Nuclear Power Plant project has been extended to 2027, and a unit of the plant will be commissioned this December if transmission lines are ready.

56m ago