দর্শনার্থীদের উৎপাত, অতিথি পাখিশূন্য হচ্ছে জাবির লেক

অতিথি পাখিদের দিকে পাথর ছুড়ে মারছেন একজন দর্শনার্থী। ছবি: অরিত্র ছাত্তার

জানুয়ারির শীতে চিরচেনা রূপ হারিয়েছে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। লেকগুলোতে যখন হাজারও অতিথি পাখিদের অবিরাম কিচিরমিচির আর এক লেক থেকে অন্য লেকে উড়ে বেড়ানোর কথা; এ বছর সেখানে লেকগুলো প্রায় পাখিশূন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি লেকে মাত্র দেড় হাজারের মতো পাখির দেখা মিলেছে এবার।

ছোট-বড় মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোট ২৬টি লেক রয়েছে। প্রতিবছর শীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে দেখা যেত অসংখ্য পাখিদের কেউ সাঁতার কাটছে, কেউ বা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে শাপলা পাতার ওপর। কেউ আবার লাল শাপলা ফুটে থাকা লেকগুলোতে খাবারের সন্ধান করছে বা অন্যদের সঙ্গে খুনসুটি করে সময় কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পাখির দেখা মিলতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন চত্বরের পাশের লেকটায়। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জয়পাড়া লেক, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের পেছনের লেক, পুরাতন কলাভবন সংলগ্ন লেকেও তাদের আধিক্য থাকতো চোখে পড়ার মতো।

ছবি: অরিত্র ছাত্তার

পরিযায়ী পাখিগুলো কেন ক্যাম্পাসের লেকগুলো ছেড়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান ৩টি কারণের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, 'সবচেয়ে বেশি পাখির দেখা মিলতো বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় পাড়া লেকে। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এ বছর লেকটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে কচুরিপানাসহ অন্যন্য জলজ উদ্ভিদে ভর্তি হয়ে আছে। প্রতিবছর আগস্ট মাসে লেকগুলো পরিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস। আমি অনেকবার বলার পরও এই লেকের তেমন সংস্কার হয়নি। ফলে পাখি যতটুকু পরিষ্কার জায়গা পেয়েছে সেখানে বসেছে।'

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল ও মনপুরা সংলগ্ন এলাকায় কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসে একটি চিঠিও দিয়েছেন বলেও জানান।

কামরুল হাসান বলেন, 'এই এলাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভেতরে হওয়ায় সাধারণত এখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী রাখার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু আমি এবার এখানে পাখিদের ঢিল ছোড়ার খবর পেয়েছি। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই এলাকাগুলোতে পাখিদের নিরাপত্তার স্বার্থে এক বা দুজন সিকিউরিটি নিরাপত্তারক্ষী রাখে সেক্ষেত্রে পাখিরা নিরাপদ থাকবে। বিকেল ৫টার পর এই এলাকায় তেমন মানুষের আনাগোনা থাকে না।'

ছবি: অরিত্র ছাত্তার

ট্রান্সপোর্ট এলাকা সংলগ্ন লেকের ব্যাপারে জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, 'এখানে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীদের উৎপাত ছিল। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশা, দর্শনাথীদের গাড়ির অবৈধ পার্কিং, উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো এগুলো তো আছেই। পরিবহন চত্বরের পেছনের জায়গাটা পাখিদের জন্য আড়াল হিসেবে থাকে। তারা নির্ভয়ে সেখানে থাকতে পছন্দ করে কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীরা আড্ডা দেওয়ার নামে পরিবহন চত্বরের পেছনে অবস্থান করায় পাখিরা ওই লেকেও এবার নেই।'

শুধু এই মৌসুমে পরিবহন চত্বরের পেছনে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যে এস্টেট অফিসে চিঠিও দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক কামরুল হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে পরিবহন চত্বরের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা করব।'

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

10h ago