৬৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার ৬ মাস পর অবসরে জাবি উপাচার্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার ৬ মাস পর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। উপাচার্য তার মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন কি না সেই নির্দেশনা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জাবি কর্তৃপক্ষ।
আরেক চিঠিতে জাবি কর্তৃপক্ষ জানায়, ৬৫ বছর বয়স পূর্তিতে শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার যে আইনি বিধান আছে তা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও মানা হচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবসরের বয়স পূর্ণ হওয়ার পর বেতন-ভাতা হিসেবে ব্যয় হওয়া টাকা আদায়ে ইউজিসির মতামত জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
হিসাব বলছে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে চলতি বছরের ২৯ জুন তার অবসরে যাওয়ার বয়স পূর্ণ হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অবসর গ্রহণ) (বিশেষ বিধান), আইন ২০১২ আইন অনুযায়ী, ৬৫ বছর পূর্ণ হলেই চাকরি থেকে অবসরে যেতে হবে৷
আইনে বলা আছে 'আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইন, অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি, বিধি, প্রবিধি, উপ আইন অথবা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দলিলে যা কিছুই থাকুক না কেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৬৫ (পয়ষট্টি) বৎসর বয়স পূর্তিতে চাকরি হইতে অবসর গ্রহণ করবেন।'
গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এগুলো জানা গেছে। ওই চিঠির একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।
গত ১৫ জুন জাবি কর্তৃপক্ষ আবারো মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। সেখানে তারা জানান, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অবসরগ্রহণ) (বিশেষ বিধান) আইন ২০১২ অনুসরণ করা হচ্ছে না। ইউজিসিতে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের চিঠিটিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ এ গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এই আইন প্রয়োগ না হওয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালেয়র কতজন শিক্ষককে কত টাকা বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য এবং সেই টাকা আদায়ে করণীয় সম্পর্কে ইউজিসির সুপারিশ চেয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, অবসরের বয়স পূর্ণ হওয়ার পর বর্ধিত সময়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ টাকা কীভাবে সংস্থান হয়েছে তা তাদের বোধগম্য নয়। যদি সরকারি অর্থে তা করা হয় সেক্ষেত্রে ওই টাকা আবার সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়া সমীচীন।
সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আইন লঙ্ঘন করে শিক্ষকদের 'সেশন বেনিফিট' দেওয়া হতো। এতে অবসরের বয়স পূর্ণ হওয়ার পরও চলতি সেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতেন।
উপাচার্যের অবসর সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যখন চিঠিটা দেওয়া হয়েছে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন বেনিফিট চালু ছিল যা গত ১ জুলাই থেকে বন্ধ করা হয়েছে। একারণেই আমি প্রথম চিঠিটা পাঠিয়েছি।'
অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অবসর সংক্রান্ত আইন না মানার ব্যাপারে জানতে চাইলে রহিমা কানিজ বলেন, 'এ সব বিষয়ে বলতে গেলে আমাকে নথিপত্র দেখতে হবে যেটা সময়সাপেক্ষ।'
অবসরের বয়স পার হওয়ার পরও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হিসেবে কোন তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হতো জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পট্রোলার মোসানুল কবির বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারব না৷'
এ সকল বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমকে ফোন ও এসএমএস দেওয়া হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইউজিসির চেয়ারম্যান দিল আফরোজা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখনো এই চিঠি পাইনি। তবে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যাপারটা গণমাধ্যমে জেনেছি৷ তিনি সেশন বেনিফিট ভোগ করছেন।'
কিন্তু আইন অনুসারে এটি যে অবৈধ সে ব্যাপারে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, এটা অবৈধ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছি। জানতে চেয়েছি, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন বেনিফিট চালু আছে। আমি এটাও জানতে চেয়েছি যে এই সুবিধা বন্ধ করা হয়ে থাকলে সেটি কবে বন্ধ করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, '২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত এই খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কত টাকা ব্যায় হয়েছে সে বিষয়েও আমি জানতে চেয়েছি।'
বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এই অর্থ সংস্থান করত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি জানতে চাইনি।'
Comments