টিকার আওতায় আসবে ১২ বছর বয়সীরাও

১২ বছর ও তার বেশি বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক এই পরিকল্পনাটি গতকাল শনিবার প্রকাশ করেছেন। এর আগে, বৃহস্পতিবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে।
প্রায় দেড় বছরের অনলাইন শিক্ষার পর স্কুল ও কলেজগুলো ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে কবে থেকে কর্তৃপক্ষ শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু করবে, তা এখনও জানা যায়নি।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি মজুত থাকার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান বাস্তবতা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে না।'
তিনি বলেন, 'গণটিকাদান কর্মসূচি এখনও নিয়মতান্ত্রিক নয়। আমাদের প্রথমে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকা দিয়ে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে। যেসব দেশে শিশুদের টিকা দেওয়া হয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করেছে। আমাদেরও সেটাই করা উচিত।'
মাত্র ২২টি দেশে ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে অথবা টিকাদান শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানান, ১৮ বছরের কম বয়সী মানুষদের ফাইজার কিংবা মডার্নার টিকা দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে।
বিভিন্ন দেশে শিশুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের টিকার ট্রায়াল চালানো হচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন বিষয়ক কারিগরি কমিটির সদস্যরা ১২ বছর বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দুই ডোজের ফাইজার ভ্যাকসিনের মাত্র ১০ লাখ ডোজ পেয়েছে। এই ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালানটি দেশে কবে এসে পৌঁছুবে, তার কোনো ঠিক নেই। নিম্ন তাপমাত্রায় একে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন থাকায় এই ভ্যাকসিনটি পল্লী অঞ্চলে দেওয়ার বিষয়টি বেশ ঝামেলাপূর্ণ।
গত সপ্তাহে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ইউনিসেফের মাধ্যমে ২৬টি ফ্রিজার আসায় দেশে এখন ফাইজার ভ্যাকসিনের এক কোটি ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
দেশের চলমান গণটিকাদান কর্মসূচি ডোজের স্বল্পতার কারণে বার বার বিঘ্নিত হয়েছে। সরকার যথেষ্ট পরিমাণ ডোজের অভাবে সাত থেকে ১২ আগস্টের বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
শনিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের বলেন, '১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষ যেকোনো (করোনাভাইরাস) ভ্যাকসিন নিতে পারেন, কিন্তু যাদের বয়র ১৮ বছরের কম, তাদেরকে সব ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০ আগস্ট থেকে ১৮ ও তার বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য নিবন্ধন করার অনুমোদন দিয়েছে। বাকিদের জন্য নিবন্ধনের ন্যুনতম বয়স ২৫।
তিনি আরও বলেন, '১২ বছর ও তার বেশি বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নীতিমালা আছে এবং আমরা দেখতে পেয়েছি, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে শিশুদের ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করব (অন্য দেশে যেটি অবলম্বন করা হচ্ছে)।'
সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সান মারিনো, স্পেন, লিথুনিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও এস্তোনিয়ায় শিশুদের টিকা দেওয়ার অনুমোদন অথবা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এশিয়ায় চীন, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান ও ভারত এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিকল্প যাচাই করে দেখছে।
যদি বাংলাদেশ ১২ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের সব শিশুকে টিকা দিতে চায়, তাহলে প্রতিটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও এই বয়স সীমার মধ্যে পড়ে এরকম অসংখ্য স্কুল ছেড়ে যাওয়া শিশুদের জন্য দুটি করে ডোজের প্রয়োজন পড়বে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী পড়ছেন।
সরকারের হাতে এখন প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ টিকার ডোজ মজুত আছে, যার বেশিরভাগই সিনোফার্মের ভ্যাকসিন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শুক্রবার জানান, সরকার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযুক্ত ভ্যাকসিন জোগাড়ের চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শারীরিকভাবে ক্লাস শুরু করার নির্ধারিত দিন ১৫ অক্টোবরের আগে ক্লাস শুরু করতে চায়, সেক্ষেত্রে তারা সেই আবেদনকে বিবেচনা করবে।
তিনি আরও জানান, আবাসিক শিক্ষার্থীদের অন্তত একটি করোনাভাইরাস ডোজ নিতে হবে এবং সংক্রমণের হার পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে।
দীপু মনি শুক্রবার জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবারও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কিন্তু যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আরও আগে ক্লাস চালু করতে চায়, সেক্ষেত্রে তারা ১২ সেপ্টেম্বরের পর তা করতে পারবে।
দীপু মনি গতকাল চাঁদপুরে সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হারকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শ্রেণীকক্ষে ক্লাস নেওয়া ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্থগিত আছে।
প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments