সবার জন্য নিশ্চিত হচ্ছে না এবারের বই উৎসব

গত ১ দশক ধরে সদ্য ছাপা হওয়া পাঠ্যপুস্তকের গন্ধ নিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করে আসছে শিশুরা। কিন্তু এ বছর সব প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সেই সৌভাগ্য নাও হতে পারে।

বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার আগামী ১ জানুয়ারি প্রাথমিকের প্রায় সব শিক্ষার্থীকে নতুন পাঠ্যবই দিতে পারবে। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সোমবার পর্যন্ত ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৯ কোটি ৯৮ লাখ প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তকের প্রায় ৯৮ শতাংশ উপজেলাগুলোতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৭১ লাখ পাঠ্যপুস্তকের অর্ধেক এখনো পৌঁছায়নি। পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিকের ৬৬ লাখ পাঠ্যবই ছাপার কার্যাদেশ এখনো দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্য, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই এনসিটিবি প্রায় ৯৫ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে থাকে।

পুস্তক প্রকাশকরা বলেন, প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সংক্রান্ত দরপত্র প্রক্রিয়া, কার্যাদেশ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে বিলম্বের কারণে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

নতুন বছর শুরু হতে মাত্র ২ সপ্তাহ সময় বাকি থাকলেও এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্রসহ এনসিটিবির সদস্য ফরহাদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা সব বই পাঠাতে সক্ষম হবো।'

দরপত্র প্রক্রিয়া ও কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব
যদিও প্রকাশকরা এতটা আশাবাদী হতে পারছেন না

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে কার্যাদেশ পাই। কিন্তু এ বছর আমরা ৯ নভেম্বর (যখন কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল) থেকে পাঠ্যবই সরবরাহের জন্য ৮৪ দিনের সময় পেয়েছি।'

তোফায়েল জানান, ৮ ডিসেম্বর প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, 'আমরা একটি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। আমাদের হিসাব অনুসারে ১ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় ৭০ শতাংশ বই উপজেলাগুলোতে পৌঁছে যাবে।'

অবশ্য এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র বলছেন, 'যদি বইগুলো সরবরাহের জন্য আপনার কাছে ৭০ অথবা ৮৪ দিন সময় থাকে, তার মানে এই নয় যে আপনি সময়সীমার শেষ দিনে সমস্ত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করবেন। আপনাকে পর্যায়ক্রমে বইগুলো সরবরাহ করতে হবে। প্রকাশকরা সেটাই করছেন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা প্রায় সব বই পেয়ে যাব।'

শিগগির প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'তারা সাধারণত বই সরবরাহের জন্য ২৫ দিনের সময় পায়। তবে এবার আমরা তাদের ১০ দিন সময় দেবো। প্রাক-প্রাথমিকের বই পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের নয়। কারণ এই বইগুলো সাধারণত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেওয়া হয় না।'

এনসিটিবির সূত্রগুলো বলছে, মহামারির কারণে কাগজপত্রজনিত কিছু সমস্যা থাকায় প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের জন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করার দরকার ছিল।

একই কারণে মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকের দরপত্র প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হয়েছে জানিয়ে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, 'প্রথম টেন্ডারের সময় প্রকাশকরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি হারে দর চেয়েছে। নতুন দরপত্রে আমরা এর তুলনায় ২৬ শতাংশ কম দর পেয়েছি।'

সরকার এবার প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪ কোটি ১৭ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এতে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

সাফল্য

নারায়ণ চন্দ্রসহ শিক্ষাবিদ ও এনসিটিবির সাবেক সদস্য ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কাজ শুরু করার পর থেকে নতুন বছরের শুরুর দিনে প্রায় সব পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছে সরকার।

এর আগে ১৯৯১ সাল থেকে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অর্ধেক বই বিনামূল্যে দেওয়া হতো।

২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ৩৬৫ কোটি ৮৪ লাখ পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। যে উদ্যোগ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।

ইনামুল হকের ভাষ্য, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সাফল্য হলো, এর কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষার্থী তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কমেছে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

15h ago