মতামত

স্কুল কমিটিতে প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব

ইলাস্ট্রেশন: জুনায়েদ ইকবাল ইসমাম

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ২০১৭ সালের নভেম্বরে একটি ঘোষণা দেয়, যা দেশের শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি 'জরুরি' বৈঠক করে সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠনের জন্য।

এই প্রস্তাবনাটি দ্রুতই বাতিল করা হয় এই যুক্তি দিয়ে যে, শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার চাপে রয়েছে।

বিষয়টি এখানেই শেষ হতে পারত। তবে মনে হচ্ছে, স্কুল থেকে রাজনীতি কখনই পুরোপুরি দূরে থাকেনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুমোদিত রাজনৈতিক কার্যক্রম না থাকলেও যারা স্কুল পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে সহজেই তা খুঁজে পাওয়া যায়।

স্থানীয় সরকার বা রাজনৈতিক নেতারা আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে, বিশেষ করে সরকারি স্কুলে যুক্ত রয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে তাদের উপস্থিতি একদিক থেকে ভালো। যদি বিশেষ কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তবে তারা সহজে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। যদিও আমাদের দেশে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন।

২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় স্কুল কমিটির এক সদস্যের ছেলের বিয়ের। আয়োজনের পুরো প্রস্তুতি নেওয়া হয় স্কুল চলাকালীন সময়ে। শিক্ষার্থীরা তখন ক্লাস করছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিয়ের আয়োজনে তাদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরাই বা কি করতে পারবে? সেই তথাকথিত নেতার কাছেই যাবে, যার জন্যই তাদের সমস্যা হচ্ছে?

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বুকেও। ঢাকার একটি স্বনামধন্য স্কুলের অধ্যক্ষকে স্কুলের মাঠে পশুর হাট বসতে দেওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি ভর্তি অনিয়মসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে কথা বলার পাশাপাশি তাদের গালিগালাজ করার বিষয়েও দোষী সাব্যস্ত হন ওই অধ্যক্ষ।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও ২টি জায়গায় একটি মিল রয়েছে। উভয়ক্ষেত্রেই পেছনে কিছু মানুষ আছেন যারা কলকাঠি নাড়ছেন। সেটা স্কুলের ওপরই হোক আর শিক্ষার্থীদের জন্য খরচে। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে এই নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেন।

স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা স্কুল কমিটিতে থাকা মোটেই খারাপ বিষয় নয়। এটা নির্ভর করে কমিটির নেতারা তাদের ক্ষমতা স্কুলের ভালোর জন্য ব্যবহার করবেন নাকি নিজের স্বার্থে, তার ওপর।

অন্যান্য দেশের স্কুলে কমিটির সদস্যরা স্কুলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের চেষ্টা করেন। তবে, আমাদের স্কুলগুলোর নিয়ন্ত্রণে যারা আছেন তারা প্রায়শই সমষ্টিগত স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে ব্যক্তি স্বার্থ দেখেন। তাতে সমানভাবে ক্ষতি হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

আর দিনের শেষে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ভোগে আমাদের শিক্ষাঙ্গন।

Comments

The Daily Star  | English

India imposes immediate ban on jute product imports from Bangladesh via land ports

The goods are bleached and unbleached woven fabrics of jute or other bast fibre, twine, cordage and cables of jute besides sacks and bags of jute

3h ago