ওসমানী উদ্যান সংস্কার: ৪ বছরে অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর ওসমানী উদ্যানের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের সময় ১০ মাসের মধ্যে এর কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ডিএসসিসি।
ওসমানী উদ্যানের সংস্কার কাজ চলমান। ছবি: ফাইল ফটো/ পলাশ খান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর ওসমানী উদ্যানের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের সময় ১০ মাসের মধ্যে এর কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ডিএসসিসি।

এরপর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সময়সীমা ৩ বার বাড়ানোর পাশাপাশি খরচও বেড়েছে।

প্রথম সময়সীমা ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।। পরবর্তীতে ২ বার সময়সীমা বাড়িয়ে যথাক্রমে ২০২০ সালের জুন ও ২০২১ সালের জুন মাস নির্ধারণ করা হয়। সবশেষ তা আবার ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আগের ঠিকাদার সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় বর্তমানে ডিএসসিসি নতুন করে দরপত্র তৈরি করছে।

বারবার সময়সীমা বাড়ানো সত্ত্বেও কাজ শেষ করতে না পারায় সিটি করপোরেশন আগস্ট মাসে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।

প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. আবুল হাসেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা একটি নতুন ফার্মকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগে একটি নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'

'নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা এটি সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করছি। তবে খরচ একই থাকবে,' তিনি দাবি করেন।

সচিবালয় এবং নগর ভবনের মাঝখানে অবস্থিত পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর নামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১টি সেক্টরের কথা মাথায় রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে পার্কটি ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছে।

২৯ একরের এই পার্কে আছে বিভিন্ন আকৃতি ও আকারের বহু বিরল গাছপালা, দুটি ছোট লেক, বালির তৈরি দ্বীপ, পাশাপাশি হাঁটার পথ, ভাস্কর্য এবং একটি অডিটোরিয়াম।

পার্কটির প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম 'বিবি মরিয়ম'। সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিশ্বস্ত সেনাপতি দ্বিতীয় মীর জুমলা ১৭ শতকের বাংলার রাজধানী ঢাকাকে দস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এই কামানটি তৈরি করেছিলেন।

সিটি করপোরেশনের মতে, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের সময়সীমা ২০১৯ সালে বাড়ানো হয়েছিল এবং ফুড কোর্ট, জাদুঘর, লাইব্রেরি ও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপনসহ অতিরিক্ত কাজের জন্য খরচ ৫৪ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৮৯ কোটি টাকা করা হয়েছে।

গত বছর ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, পার্কের ভেতরে ২০০টি গাড়ি রাখা যাবে এমন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং স্পেস তৈরি করা হবে। তবে ডিএসসিসি সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে।

প্রকল্পের মূল নকশাকারী স্থপতি রফিক আজম জানান, নতুন দরপত্র আহ্বান করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা নকশা থেকে লাইব্রেরি বাদ দিয়েছি এবং কোনো পার্কিং ব্যবস্থা থাকছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'পার্কটিকে মানুষের জন্য উপকারী করে তোলা খুবই জরুরি। এটি আগে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। আগে এটি ভবঘুরে এবং মাদকসেবীদের আখড়া ছিল।'

ফেব্রুয়ারির শুরুতে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক আরিফুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, বিলম্বের জন্য তারা এককভাবে দায়ী নয়, বরং এটি একটি যৌথ ব্যর্থতা।

আরিফুল বলেছিলেন, 'প্রকল্পটির কাঠামোগত অংশটি স্থাপত্য অংশের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। এ ছাড়া, মহামারির কারণে  আমাদের কাজের অগ্রগতিও কম হয়েছে।'

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments