‘আট দিন ধরি বুক সমান পানি, আমরারে কেউ কিচ্ছু দিছে না’

গত আট দিনে ধরে এই নারীর বাড়িতে পানি। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

'আট দিন ধরি বুক সমান ফানি (পানি)। আমরারে (আমাদের) কেউ কিচ্ছু দিছে না। আল্লাহর ওয়াস্তে আমরারে দিয়া যাইন।'

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সরু ঢালাই রাস্তা 'বাংলাবাজার ব্রিটিশ রোডের' পাশে মাজেরগাঁওয়ের বাসিন্দা এক মধ্যবয়সী নারী ত্রাণের জন্য এমন আকুতি জানান।

আজ বুধবার দোয়ারাবাজার পেরিয়ে মাজেরগাঁওয়ের ৭টি পরিবারের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের।

সে সময় জীর্ণশীর্ণ চক্ষু কোটরাগত এই নারী কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠছিলেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলের মানুষ বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে আছেন। ছবি: মওদুদ সুজন/স্টার

তিনি বলেন, 'গত শুক্রবার যখন বুক সমান পানি ঘরে প্রবেশ করে, তখন তার ২টি ভেড়া স্রোতে হারিয়ে যায়।'

স্থানীয় আরেক বৃদ্ধা বলেন, 'আমার ঘর, ১২টি মুরগী, ৩টি ছাগল সব ভেসে গেছে। ৩০ মণ ধান ভেসে গেছে। খাবার নেই। কিছু নেই।'

ওই নারীর পাশে থাকা এক পুরুষ জানান, এই এলাকায় আজই প্রথমবারের মতো তারা ত্রাণ পেয়েছেন।

বন্যায় ঘর, মুরগী, ছাগল ভেসে গিয়ে অসহায় এই বৃদ্ধা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সর্পিল সুরমা নদীর গোবিন্দগঞ্জ ঘাট থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে প্রায় ৫ ঘণ্টা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করে গ্রামটিতে যাওয়ার পথে দেখা যায়, সেনা সদস্যদের একটি স্পিডবোটকে ত্রাণ নিয়ে দোয়ারাবাজার স্কুলঘাটে ভিড়তে দেখা যায়।

সেখানে স্থানীয়দের ত্রাণ সংগ্রহের জন্য স্পিডবোটে লাফিয়ে উঠতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের উত্তরাঞ্চল ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলের মানুষ বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে আছেন।

আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের এই বন্যায় এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এসব এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

ত্রাণ নিতে এসে নয়াপাড়া-রংপুর গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী যুবক মঈনুদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকালে তিনিসহ তার পরিবারের সবাই কিছু বিস্কুট কিনে খেয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরার ঘরো আটু (হাটু) সমান পানি। ঘরো ১৮ জন মানুষ। অতো মানুষ লইয়া কিতা যে করতাম মাথাত ধরে না।'

মানিকপুর গোদাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রাণ নিতে এসে ৩ সন্তানের মা তাসলিমা ডেইলি স্টারকে জানান, উঁচু টিলা হওয়ায় তাদের ঘরে পানি ওঠেনি। তাই তারা রান্না করে খেতে পারছেন।

তবে স্থানীয়রা জানান, এই এলাকা ও পার্শ্ববর্তী চাঁনপুরের অনেকেই নিজেদের ঘরে খাবার না থাকলেও, দিনে দু-বেলা খেতে পারছেন প্রতিবেশীদের সহায়তায়।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago