বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ, পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে
প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্লাবিত এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এ অবস্থায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, সিলেট মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, সদর উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা ও সুনামগঞ্জের ছাতকসহ ২ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন সিলেটের বন্যা প্লাবিত গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ কিছু উপজেলার অন্তত ৮২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ জেলার পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন প্রায় সবকটি উপজেলায় এখন বিদ্যুৎ নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরাফাত-আল-মাজিদ ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্যায় ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। ২ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।'
সিলেট নগরীর উপকন্ঠে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি বাড়তে শুরু করায় যে কোনো সময় সিলেট নগরীসহ জেলার বাকি এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার বড় অংশ প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, সদর উপজেলা ও সুনামগঞ্জ শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপরে, সিলেট নগর পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এ ছাড়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সারিগোয়াইন নদীর পানি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাটে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপরে এবং পুরাতন সুরমা সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জের মহিষখলায় ৪০৬ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড়ে ৩২০ মিলিমিটার, সিলেটের কানাইঘাটে ৮১ মিলিমিটার, সিলেট নগরীতে ৭৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ছাতকে ৩৬৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ শহরে ৩৭৫ মিলিমিটার, সিলেটের লালাখালে ১৪৫ মিলিমিটার ও জাফলংয়ে ২৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
আজ শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের সই করা এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এছাড়া সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চলও বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে আছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
Comments