সিলেট-সুনামগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ মানুষ, আশ্রয়হীন অগণিত

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি নামছে না। এতে নিরাপত্তা ও ত্রাণের আশায় পানিবন্দি মানুষরা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ২ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় রাস্তার উপর আশ্রয় নেওয়া একটি বন্যা দুর্গত পরিবার। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি নামছে না। এতে নিরাপত্তা ও ত্রাণের আশায় পানিবন্দি মানুষরা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ২ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই জেলার মোট ৭১৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলা দুটির বন্যা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে এই পরিবারটিও। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ। এছাড়াও অসংখ্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু রাস্তায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। রাস্তার উপরে তেরপল বা প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে অবস্থান করছেন তারা।

এ অবস্থায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণের হাহাকার বাড়ছে। একদিকে যেমন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।

পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকাই শুধু নয়, অনেক আশ্রয়কেন্দ্রেও পৌঁছায়নি সরকারি ত্রাণ সহায়তা।

তবে সরকারি সহায়তা ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজেরাই খাদ্য ও পানীয়ের সংস্থান করছেন বন্যার্তরা।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাসিন্দা স্বাধীন পিন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিলেও, এখন পর্যন্ত সেখানে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।'

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের উপরে সপরিবারে আশ্রয় নেওয়া আকবর হোসেন বলেন, 'বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায়। স্থানীয়রা মাঝে মাঝে খাবার সাহায্য দিয়েছেন। তবে সরকারি কোনো সাহায্য পাইনি।'

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান রোববার বিকেলে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, জেলার ৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৬১২ টন চাল, ৭ হাজার ৯০০ প্যাকেট ‍শুকনো খাবার, নগদ ৩৫ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকার শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সুনামগঞ্জের ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, 'বন্যা দুর্গতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৪৫০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের ৩০ হাজার মানুষকে খিচুরি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে।'

সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি উজানে স্থিতিশীল ও ভাটিতে কিছুটা কমলেও, বেড়েছে কুশিয়ারা, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি। 

ফলে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, রোববার বিকেলে সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা সকাল থেকে অপরিবর্তিত আছে।

তবে সুরমা নদীর পানি সিলেট নগরী পয়েন্টে সকাল থেকে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সুনামগঞ্জ শহরে ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা সকালের চেয়ে আরো ১২ সেন্টিমিটার বেশি।

এই নদী বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে সারাদিন অপরিবর্তিত অবস্থায় বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান চৌধুরী জানান, 'আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।'

Comments