সিলেট-সুনামগঞ্জ: কেউ কারও খবর জানে না

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সাদ্দাম মিয়া মৌলভীবাজারের একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাদ্দাম মিয়া বলেন, 'শেষবার যখন মায়ের সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে, ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। তাই তিনি ঘরের ভেতর খাটের ওপর বসে আছেন। এরপর থেকে কোনোভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আশপাশের কারুর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না।'

বন্যায় মৌলভীবাজার থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জে যাওয়ার পথও এখন বন্ধ। এ অবস্থায় মায়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এই ব্যক্তি।

এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ভাটি তাহিরপুরের বাসিন্দা পীযূষ পুরকায়স্থ চাকরিসূত্রে সিলেটে থাকেন। বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা আর ছোট ভাইবোন। সাদ্দাম মিয়ার মতো তিনিও গতকাল শুক্রবার থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

পীযূষ বলেন, 'বৃহস্পতিবার থেকে আমাদের বাড়িতে বন্যার পানি উঠতে শুরু করে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শেষবারের মতো বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। ৩ দিন ধরে আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। নিজে সংগঠন করার সূত্রে এলাকার অনেক মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। কিন্তু কাউকে ফোনে পাচ্ছি না। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।'

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে ঠিকমতো। এ অবস্থায় সাদ্দাম মিয়া ও পীযূষের মতো হাজারো মানুষ নিজ পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায়।

টেলিকম খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিদ্যুৎ না থাকায় পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে তারা মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও পেরে ওঠা যাচ্ছে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষদের সহায়তারা জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

‘Reforms not going beyond report writing’

Chairmen and members of several reform commissions yesterday voiced frustration over the lack of visible progress, more than a year after the interim government took office.

9h ago