ঝিনাইদহ

১০ মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ২০ গ্রাম

রাস্তায় ও রাস্তার পাশে প্রায় শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে। ছবি: স্টার

ঝিনাইদহে কালীগঞ্জে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে গেছে উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম। আজ শনিবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায় এবং মুহূর্তেই বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়।

স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর, রঘুনাথপুর, পিরোজপুর ও খোসালপুরসহ ২০টি গ্রাম ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১০ মিনিট স্থায়ী হওয়া এই ঝড়ে বাড়িঘর, আম, কলা, ফসল, বিদ্যুতের পোল ও বিভিন্ন গাছ ভেঙে গেছে। ফলে, ওই এলাকা এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে।

তীব্র ঝড়ে ঝিনাইদহ সদরের গোয়ালপাড়া, ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন সড়ক, কালীগঞ্জে বারোবাজার, রঘুনাথপুর, কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও রাস্তার পাশে প্রায় শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে সকাল ৬টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে যানবাহন চলাচল। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয় আরও ৪ জন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ৪ ঘণ্টা চেষ্টা করে গাছ কেটে সরানো করে। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সকাল ১০টা থেকে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঘরে টিনের ঘরের চাল উড়ে গেছে। ছবি: স্টার

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, ঝড়ের পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে সড়কে গাছ ভেঙে পড়ার খবর আসে। তখন ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কেটে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাখি। প্রায় ৪ ঘণ্টা কাজ শেষে সম্পূর্ণভাবে সড়কে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভেঙে পড়া গাছ অপসারণ করি।

ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার রাশিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঝড়ে কিছু স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত লাইন চালু করতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা কাজ করছে। তবে, কিছু কিছু এলাকায় বিকেল পর্যন্ত লাইন চালু করেত পারেনি।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তালিকা শেষ হলে তারা যাতে সহযোগিতা পান সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।

উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, ঝড়ে তার ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। ঘুমানোর মতো কোনো স্থান নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ায় মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। ছবি: স্টার

এনায়েতপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, '১০ মিনিটের ঝড়ে আমাগের সব শ্যাষ করে দিয়ে গেছে। গাছ-পালা ভাঙ্গে গেছে। কারেন্টের পোল ভাঙ্গে গেছে। রাস্তা বন্ধ ছিল। আমাগের ম্যালা ক্ষতি হয়েছে।'

পিরোজপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, 'সকালে হঠাৎ করে খুব ঝড় শুরু হয়। এর আগে আম্পানের সময় যে ঝড় হয়েছিল। তেমন ঝড় আজকে হয়েছে। আমাগের বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। আম বাগান, লিচু বাগান, কলা বাগানের ক্ষতি হয়েছে।'

কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, 'ঝড়ে ৩৩টি বিদ্যুতের পোল ভেঙেছে। তাছাড়া ৩৩ কেভি লাইনের উপর গাছ পড়েছে ও তার ছিঁড়ে গেছে। বর্তমানে মেরামতের কাজ চলছে। সঠিক সময় বলা সম্ভব না। তবে, বিকেলের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।'

১১ নং রাখালকাছি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মফিদুল ইসলাম মন্টু, ৫০ হাজার গাছ ভেঙে। এছাড়া ২ থেকে ৫ শতাধিক ঘরে ভেঙে গেছে। কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

4h ago