ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ১৮ অবৈধ ইটভাটা

স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ইটভাটার চুল্লী। সেখানে আগুন জ্বলছে। ইট পোড়ানো হচ্ছে হরদম। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা দিয়ে মাটি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠে ধোঁয়া আর ধুলো। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তালুকদার বাড়ী খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত মেহেদী ব্রিকস। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে এটির কার্যক্রম। ছবি: মাসুক হৃদয়

স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ইটভাটার চুল্লী। সেখানে আগুন জ্বলছে। ইট পোড়ানো হচ্ছে হরদম। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা দিয়ে মাটি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠে ধোঁয়া আর ধুলো। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ী খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পূর্ব পাশ ঘেঁষে আছে মেহেদী ব্রিকস নামের ইটভাটাটি। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুহিলপুর থেকে পূর্ব দিকে কিছু দুর গেলেই চোখে পড়বে স্কুলটি।

স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ধুলোর আস্তরণ জমেছে বেঞ্চের ওপর। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বই-খাতায়ও ধুলো জমে। ট্রাক্টর চলাচলের শব্দে কানে তালা লাগে।

শুধুমাত্র এই বিদ্যালয়টি-ই নয়, পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়টি উপজেলায় ১৮টি অবৈধ ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক কিলোমিটারের মধ্যে এই ইটভাটাগুলো। এসব স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কালিসীমা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালগাঁও-কালিসীমা স্কুল এন্ড কলেজের ঠিক পশ্চিম পাশেই ‌রয়েছে মেসার্স মিয়া ভাই অ্যান্ড কোং (আজিম ব্রিকস ফিল্ড)। এলাকাবাসী ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও ইটভাটাটি এখনো‌ চালু আছে। ছবি: মাসুক হৃদয়

আইন অনুযায়ী, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জলাভূমি বা কৃষিজমি, পাহাড়, সরকারি রাস্তা বা বসতি এলাকার এক হাজার মিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আইন উপেক্ষা করে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। তবে স্থানীয় প্রশাসন আইন লঙ্ঘনের জন্য ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সূত্র জানায়, মেহেদী ব্রিকসের উত্তর পাশে বাকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দুরে অবস্থিত পবন ব্রিকস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোকর্ণঘাট সংলগ্ন আরব ব্রিকস-এর ৬০০ মিটারের মধ্যে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশেই আছে রনি ব্রিকস নামে আরেকটি ইটভাটা। এই দুই ইটভাটার ৫০০ মিটারের মধ্যে পৌর এলাকার সীমানা ও আবাসিক এলাকা শুরু হয়েছে। 

একই উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সিন্দুউড়া গ্রামে মেসার্স ভরসা ব্রিকস ফিল্ড এবং মিয়া ভাই অ্যান্ড কোং (আজিম ব্রিকস ফিল্ড) স্থানীয় কালিসীমা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি। নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৫৫০ মিটার দুরে নদীর তীরে দুটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।

বিজয়নগর উপজেলার রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে আছে ভূঁইয়া ব্রিকস। স্কুলটি থেকে একই দূরত্বে আছে মদিনা ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটা। এই উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের টানমনিপুর গ্রামের রতন ব্রিকসের কাছেই আছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাজী ব্রিকস নামে একটি ভাটা একই উপজেলার চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। বুধন্তী আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬০০ মিটার দূরে টিএন্ডসি ব্রিকসের অবস্থান।

সরাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়াকান্দি গ্রামের নিউ মায়ের দোয়া ব্রিকস বৈশামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দুরত্বে গড়ে উঠেছে। এর পাশেই আছে সুবর্ণা ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটা।‌‌ একই উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রামের নিউ সমতা ব্রিকসের কাছেও আছে একটি প্রাইমারি স্কুল।

আখাউড়া উপজেলার মোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬০০ মিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথ থেকে ১৫০ মিটার দুরত্বে গড়ে উঠেছে তিতাস ব্রিকস।

সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কথা হয় তালুকদারবাড়ি খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারুল বেগমের সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইটভাটা স্কুলের বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করছে। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা ব্যবহার করে ইট পরিবহন করা হয়, এটাও শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলছে।'

একই উপজেলার কালিসীমা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, ইটভাটা বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের স্কুলের পাশে একটি হাই স্কুল এবং কলেজও রয়েছে। ইট পোড়ানোর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ভাটা মালিকদের সঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি একাধিকবার বৈঠক করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, জেলায় মোট ১৮১টি ইটভাটা রয়েছে যার মধ্যে ৯৯টি অবৈধভাবে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ইটভাটাসহ সহ অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Submarine cable breakdown disrupts Bangladesh internet

It will take at least 2 to 3 days to resume the connection

58m ago