প্রিপেইড গ্যাস মিটারে অনেক সুবিধা, কিন্তু পাচ্ছেন না গ্রাহকরা

শামুকের গতিতে এগোচ্ছে প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর কাজ। গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ অসংখ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রিপেইড গ্যাস মিটারের পরিমাণ এখনো অনেক কম।

শামুকের গতিতে এগোচ্ছে প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর কাজ। গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ অসংখ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রিপেইড গ্যাস মিটারের পরিমাণ এখনো অনেক কম।

উদাহরণ হিসেবে রাজধানীর বাসিন্দা তুহিন রহমানের কথা বলা যায়। তিনি আগে প্রতিমাসে গ্যাসের বিল বাবদ ৯৭৫ টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু গত অক্টোবরে তার বাসায় প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর পর থেকে এই খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে।

তুহিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, '(প্রিপেইড মিটার বসানোর কারণে) আমার বাসায় গ্যাসের খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।'

অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে একই ধরণের উত্তর পাওয়া গেছে। তারা জানান, গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তাদের প্রথাগত বিলিং ব্যবস্থার বদলে প্রিপেইড মিটার চালু করার পর তাদের গ্যাসের জন্য খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

এ ক্ষেত্রে শুধু গ্রাহকের সুবিধা হবে, তা নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের কারণে দেশের গ্যাস সঞ্চয় কমছে। এ অবস্থায় গ্যাসের ব্যবহার ও অপচয় কম হলে ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।

প্রিপেইড মিটারবিহীন গ্রাহক মাসে গড়ে ৭০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন। অপরদিকে, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক মাসে গড়ে মাত্র ৩০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন।

কিন্তু বিভিন্ন সুবিধা ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশ থাকা স্বত্বেও প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে।

এই প্রক্রিয়াটি প্রায় ১ দশক আগে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ মিটার বসানো হয়েছে। ফলে প্রায় ৪৩ লাখ আবাসিক গ্রাহকের ৯০ শতাংশই এখনো অধীর আগ্রহে মিটারের অপেক্ষায় আছেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা সাধারণ গ্রাহকের জন্য ৮৭ ঘনফুটের বিল তৈরি করেন। কিন্তু প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা মাসে ৫০ ঘনফুটেরও কম গ্যাস ব্যবহার করে।

মিরপুরের বাসিন্দা আজিমুর রহমান গণি বলেন, 'আমি একটি ২ বার্নারের চুলার জন্য প্রিপেইড গ্যাস মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দেড় মাস ব্যবহার করি।'

সাধারণ পাইপলাইনের একজন গ্রাহককে ডবল বার্নার চুলার জন্য মাসে ৯৭৫ টাকা ও সিঙ্গেল বার্নার চুলার জন্য ৯২৫ টাকার বিল দিতে হয়।

২০১১ সালে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। ২৮ লাখ গ্রাহকের এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার মিটার বসিয়েছে।

এই প্রকল্পের অর্থায়ন করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি এবং মিটারগুলো আমদানির জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে টার্ন-কি ভিত্তিক চুক্তি করা হয়।

সংস্থাটি একই সঙ্গে গ্রাহকদের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জে সহায়তা করার জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গেও একটি চুক্তি করেছে।

তবে গ্রাহকরা রিচার্জের এই প্রক্রিয়ায় খুশি নন, বরং বিরক্ত। কারণ কার্ড রিচার্জ করার জন্য তাদেরকে এজেন্টের কাছে সশরীরে যেতে হয়। মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাপের মাধ্যমে প্রিপেইড বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করা গেলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এই সুবিধা নেই।

তিতাসের একজন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৪ হাজার টাকা দামের এই মিটারগুলো একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে। এই মিটারগুলো ২০ বছর টিকতে পারে।

এখন গ্রাহকদের প্রতি মাসে এই মিটার ব্যবহারের জন্য ৬০ টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে।

কর্মকর্তা বলেন, 'এই ভাড়া ১০০ টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আমরা মিটারের দাম ১৩ বছরের মধ্যে তুলে আনতে পারি।'

২০২৪ সালের মধ্যে সব আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিতাস আরও ১২ লাখ মিটার বসানোর জন্য ২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

তবে, উভয় প্রকল্পই যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিভিন্ন সময় প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশ দিয়েছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, '২০১৯ সালে একটি পরিপত্রের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি গ্রাহকদের গ্যাসের অপচয় কমাতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তাদের গ্যাসের মাসিক খরচ কমে যাবে।'

বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শুরুতে মানুষ মিটার বসানোতে অনাগ্রহী ছিল।

'এখন তারা মিটার পেতে আগ্রহী। এখন মিটার বসাতে খুব বেশি সময় লাগবে না,' যোগ করেন তিনি।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করে। ৫ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ৬০ হাজার মিটার বসিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও ১ লাখ মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের কাজ জুন মাস থেকে শুরু হবে বলে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডও মিটার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছে।

বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) আওতায় থাকা অপর ৩টি প্রতিষ্ঠান হল বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম জানান, মিটার বসানোর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক চাইলে তাকে মিটার কিনে বসানোর সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

বিইআরসি ২০১৫ সালের ট্যারিফ আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস মিটার প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ দেয়, কিন্তু তারা সেটি মেনে চলছেন না। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শামসুল বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের লঙ্ঘন করছেন এবং তাদেরকে জরিমানা অথবা জেল অথবা উভয় ধরনের শাস্তি দেওয়া উচিৎ। কিন্তু বিইআরসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।'

'এই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের জন্য অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করছেন যাতে তাদেরকে ঠকানো যায়,' যোগ করেন তিনি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
interim government's dialogue with BNP

Reforms ahead of polls: BNP waits with cautious optimism

Having weathered a very difficult 15 years as de facto opposition, the BNP now wants only the essential reforms done to ensure free and fair polls.

13h ago