বন বিভাগের ‘সুফল’ প্রকল্প বিফল

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় নয় মাস আগে ৩৭ হাজার ৫০০ ঝাউ গাছের বন থাকলেও বনকর্মীদের অবহেলায় সরকারের এই বনায়ন কর্মসূচী ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় সরকারের বনায়ন কর্মসূচিতে লাগানো অনেক গাছ অযত্ন ও অবহেলায় মরে গেছে। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় নয় মাস আগে ৩৭ হাজার ৫০০ ঝাউ গাছের বন থাকলেও বনকর্মীদের অবহেলায় সরকারের এই বনায়ন কর্মসূচী ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।

সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুডস (সুফল) প্রকল্পের অধীনে বন বিভাগ গত বছরের জুন মাসে উত্তর কাট্টলি উপকূলীয় এলাকায় এই বাগান তৈরি করেছিল বলে জানান বন কর্মকর্তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বনকর্মীরা গাছগুলোর দেখাশোনা করেনি এবং গাছ রক্ষায় কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।

ফলে প্রাকৃতিকভাবে অনেক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া জমি দখলের জন্য দখলদাররা ইচ্ছাকৃতভাবে গাছের ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, 'প্রায় নয় মাস আগে বন বিভাগ ওই এলাকায় যে ঝাউ গাছ লাগিয়েছিল, বন কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে প্রায় সব ঝাউ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।'

'তারা (বন কর্মকর্তা) শুধু গাছ লাগিয়েছে। কিন্তু তারা কখনোই গাছের যত্ন নেয়নি। অন্যদিকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের জায়গা দখলের জন্য গাছের চারাগুলো উপড়ে ফেলেছে,' বলেন এলাকার আরেক বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুডস (সুফল) প্রকল্পের আওতায় এসব গাছ রোপণ করেছে বলে জানান বন কর্মকর্তারা।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুর রহমান বলেন, 'প্রায় ২৭ শতাংশ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা প্রায় ৩৭ হাজার ৫০০ গাছ লাগিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার গাছ কিছু ইটভাটা মালিকদের কারণে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গবাদি পশু চরানোর কারণে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

গাছ রক্ষায় কয়েকজন বনকর্মীর অবহেলা ছিল বলেও তিনি স্বীকার করেন।

অবহেলার জন্য দায়ী বন কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় ইটভাটাগুলো কীভাবে পরিচালিত হয় জানতে চাইলে ডিএফও বলেন, 'ইটভাটা মালিকরা কিছু দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব চালাচ্ছেন।'

যোগাযোগ করা হলে, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) গোবিন্দ রায় বলেন, 'বাংলাদেশে সহযোগিতামূলক বন ও সুরক্ষিত এলাকা (পিএ) সহ-ব্যবস্থাপনার উন্নতির লক্ষ্যে সুফল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই এ শুরু হয়েছিল। ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি টাকা বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে।'

তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো হবে। বর্তমানে ২৮টি জেলার ২৮টি স্থানে বনায়ন কার্যক্রম চলছে।

'লক্ষ্য অনুযায়ী, আমরা বিকল্প আয়ের উৎস তৈরির মাধ্যমে তাদের আয় বাড়াতে বনের উপর নির্ভরশীল ৪০ হাজার পরিবারকে সম্পৃক্ত করব,' তিনি যোগ করেন।

গাছ রক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গাছ রক্ষায় প্রতিটি প্রকল্পের জায়গায় বনকর্মীদের দল মোতায়েন রয়েছে।'

'বৃক্ষ রক্ষায় বনকর্মীদের দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব,' বলেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

তবে এই ব্যাপারে জানতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

The cost-of-living crisis prolongs for wage workers

The cost-of-living crisis in Bangladesh appears to have caused more trouble for daily workers as their wage growth has been lower than the inflation rate for more than two years.

47m ago