করোনা শনাক্তের পর বন্ধ সিডনির পার্কলি কারাগার

বন্দিদের সরানো হলো অন্য কারাগারে
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনির একটি কারাগারে করোনা শনাক্তের পর বন্দিদের সরিয়ে নিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিডনির উত্তর-পশ্চিমে পার্কলি শহরের এই কারাগারটি রাজ্যের দুটি প্রধান রিমান্ড কারাগারের মধ্যে একটি।

প্রায় ১৩ হাজার ১১৮ বন্দির ধারণ ক্ষমতার এই কারাগারে ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

রাজ্যের ৩৬টি কারাগারের মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের দিক থেকে পার্কলিই সর্বোচ্চ শনাক্তের তালিকায় আছে। এর আগে বাথার্স্ট কারাগারের নয় কর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছিল। কারাগারে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমস্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি স্টুয়ার্ট লিটল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পার্কলি কারাগার থেকে বন্দিদের অন্যান্য রিমান্ড কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজ্যের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ড. কেরি চ্যান্ট আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, 'কারাগারের মধ্যে করোনার এই প্রাদুর্ভাব খুব উদ্বেগজনক।'

কারাগারে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পাশাপাশি বন্দিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

তবে এখন পর্যন্ত কত বন্দিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তা জানাতে তিনি অস্বীকার করেন। নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার বন্দিদের টিকা দেওয়ার সংখ্যা প্রকাশ করতে অস্বীকার করায় ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে।

কয়েক মাস ধরেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেসরকারি কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা করোনা প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় বন্দি ও কারাগারের কর্মীদের মধ্যে দ্রুত টিকা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক সোফি ম্যাকনিল গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার বন্দিদের টিকা দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করছে না, এটি আপত্তিকর।' দুর্বল গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও বন্দিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইতিহাস বলে, এক সময় গোটা অস্ট্রেলিয়াই ছিল একটি 'কারাগার'। ব্রিটিশরাজের কলোনিগুলো থেকে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের এনে এই সমুদ্র পরিবেষ্টিত দুর্গম জনপদে নির্বাসিত করা হতো।

১৭৮৮ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৬২ হাজার অপরাধীকে ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছিল। অধিকাংশ কয়েদিকে নির্বাসিত করা হয়েছিল নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে। এখনো অস্ট্রেলিয়া সব থেকে বড় কারাগারটি রয়েছে এই রাজ্যে।

ব্রিটিশ সরকার ১৮ শতকের গোড়ার দিকে অপরাধী ও ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের আমেরিকার উপনিবেশে নির্বাসন শুরু করে। আমেরিকান বিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার নির্বাসন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ব্রিটিশরাজ বিকল্প ভূমি খুঁজতে থেকে। এর আগে ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ নাবিক জেমস কুক ব্রিটেনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের আদিবাসীদের একটি জনপদ দখল করেন।

ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়াকে দণ্ডিত উপনিবেশের স্থান হিসেবে বেছে নেয়। ১৭৮৭ সালে প্রথম ১১ অপরাধীকে নিয়ে একটি জাহাজ ইংল্যান্ড থেকে রওনা দিয়ে ১৭৮৮ সালের ২০ জানুয়ারি নিউ সাউথ ওয়েলসের শহর সিডনিতে পৌঁছায়।

১৮৩০ এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় অপরাধী নির্বাসন তুঙ্গে উঠলে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। ১৮৬৮ সালে অপরাধীদের নিয়ে শেষ জাহাজটি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল।

২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার কারাগারগুলোতে এখন বন্দি আছেন ৪২ হাজার ৮৫৫ জন অভিযুক্ত।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh women's football team qualify for Asian Cup

Bangladesh women's football team qualify for Asian Cup

Bangladesh women's football team made history as they qualified for the AFC Women's Asian Cup for the first time. 

1h ago