তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিককে হুমকি-হেনস্তার অভিযোগ

লিন ও'ডোনেল। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক লিন ও'ডোনেলকে আটক করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার এবং তাকে নিজের প্রতিবেদন বানোয়াট বলে টুইট করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে।

এসবের মাধ্যমে তালেবান নিজেদের 'সত্যিকারের চেহারা' দেখিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন লিন ও'ডোনেল। 

লিন ও'ডোনেল গত রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গেলে তাকে আটক করা হয়। পরে সেখানকার অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান।  

মুক্তির পর লিন ও'ডোনেল গণমাধ্যম এসবিএস নিউজকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

তিনি জানান, গত রোববার তিনি কাবুলে যান। তিনি যে একজন বিদেশি প্রতিবেদক হিসেবে সে দেশে গিয়েছেন, তা জানাতে সরাসরি আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে যান তিনি। কিন্তু সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বলখি তাকে বলেন, তিনি কোনো 'স্বীকৃত সাংবাদিক নন'।

তার বৈধ ভিসা ছিল। এরপরও আফগান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা তাকে দেশটি ছেড়ে যেতে বলার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলে জানানো হয় তাকে।

'আব্দুল কাহার বলখি আমাকে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী উপনিবেশবাদী হিসেবেও অভিহিত করেন', বলেন লিন ও'ডোনেল।

অস্ট্রেলিয়ার এই সাংবাদিক আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাকে আফগানিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকের ওপর চালানো একটি মারাত্মক আত্মঘাতী হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাকে সহিংসতার হুমকি দেন।

'তার আচরণ (মুখপাত্র) যথেষ্ট কূটনৈতিক ছিল না', বলেন লিন ও'ডোনেল।

তিনি জানান, পরে আফগান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে হবে তাকে।

এরপর লিন ও'ডোনেলকে আটক করে গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে গালিগালাজ করা হয়। তার সব লেখা অসত্য বলে অভিযোগ তোলেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা আফগানিস্তান বিষয়ক লিন ও'ডোনেলের ২টি লেখা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তাকে বলা হয়, তিনি এগুলো বানিয়ে লিখেছেন এবং এই লেখাগুলো যাচাই করে লেখা হয়নি।

এ সময় লিন ও'ডোনেল তাদের বলেন, 'আমি যাচাই করেছি। সবকিছুই রেকর্ডে ছিল।'

তালেবান তাকে এসব তথ্যের সোর্স প্রকাশ করতে বলেন তখন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি।  

'তারা আমাকে বলেন, আমার সব প্রতিবেদন বানোয়াট, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং সেগুলো যাচাই করে লেখা হয়নি—এ কথা লিখে যদি আমি টুইট না করি, তাহলে আমাকে কারগারে পাঠানো হবে', বলেন লিন ও'ডোনেল।

ঘন্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকরা তার সাথে যোগাযোগ করতে এবং তার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারেন।

তিনি বলেন, 'এটি একটি জবাবদিহিতাহীন শাসন। তারা নির্বিচারে, একতরফাভাবে কাজ করে। কোনো আইন নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই। শুধুমাত্র সাবেক সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য মানুষকে ক্রমাগত গুম করা হচ্ছে, বিনা কারণে আটক করা হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে।'

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ শুরু করার পর থেকে ১৭৩ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে আটক করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। একই সময়ে আইএসের হাতে ৫ সাংবাদিক খুন হয়েছেন।

ও'ডোনেল বলেন, 'তালেবান নিশ্চিত করেছে, আফগানিস্তানে যেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর না থাকে। তারা মিডিয়া সংস্থাগুলো দখল করে নিয়েছে।'

এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, লিন ও'ডোনেলকে আফগানিস্তানে থাকাকালীন কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Tajia procession marks holy Ashura in Dhaka amid tight security

Crowds began gathering at the site from the early hours, with many attending alongside their families and children

1h ago