হুমায়ুন আজাদ আমারও শিক্ষক ছিলেন
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটি এমন ঘনিষ্ঠ আর গভীর ছিল যে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমার অন্তরলোকেরও শিক্ষক।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনির বাসায় রাত ভোর করা আড্ডায় বসে আমরা ভুলে যেতাম আমাদের সম্পর্ক। তিনিই ভুলিয়ে দিতেন।
বাইরে থেকে তাকে মনে হতো একরোখা, মেজাজী আর উদ্ধত, কিন্তু ভেতরে তিনি ছিলেন স্নিগ্ধ ও কোমল। তিনি ছিলেন গোলাপের পাপড়ির মতো, আস্তে আস্তে মেলতে থাকেন এবং সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, একুশে বইমেলায়। প্রায় ১২ বছর পর তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
আগামী প্রকাশনীর স্টলে তার পাশে চেয়ার টেনে বসে বললাম, স্যার কেমন আছেন? তিনি তখন মাথা নিচু করে নিমগ্ন হয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন ভক্তদের। কোনো উত্তর দিলেন না। আমি আবার বললাম, আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার? তিনি মাথা না তুলেই বললেন, আপনি কি দেশের বিখ্যাত কেউ যে আপনাকে চিনতে হবে! আমি বলি, জি স্যার আমি দেশের খুব বিখ্যাত একজন, আপনার মতোই বিখ্যাত। তিনি অটোগ্রাফ দিতে দিতেই জানতে চাইলেন, কেন আপনি বিখ্যাত? কিসের জন্য বিখ্যাত? আমি হাসতে হাসতে বলি, আমি বিখ্যাত এ জন্য যে, আমি হুমায়ুন আজাদের ছাত্র। তিনি মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কবে এসেছো আকিদুল?
সেটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।
হুমায়ুন আজাদ, শীর্ণ একজন মানুষ ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের এতটা জায়গা একা দখল করে ছিলেন তা তার চলে যাওয়ার আগে আমরা বুঝিনি। আজন্ম অহংকারী এই মানুষটি কাউকে তার আগে যেতে দেননি। অনেককেই পেছনে ফেলে একা একা পথ হেঁটেছেন। চলেও গেলেন অনেকের আগে। তার অগ্রজ আর সহযোদ্ধাদের অনেকেই পেছনে পড়ে রইলেন।
উল্লেখ্য, প্রথাবিরোধী জ্যোতির্ময় লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৪ জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
আকিদুল ইসলাম: হুমায়ুন আজাদের ছাত্র, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
Comments