রাশিয়া মহাকাশ স্টেশন ধ্বংস করলে কী পরিণতি হতে পারে?

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ছবি: স্পেসডটকম

পৃথিবী, বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা ও অভিযান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)। সম্প্রতিকালে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। 

রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের প্রধান দিমিত্রি রোগোজিনের টুইটের বরাতে বিজনেস ইনসাইডার জানিয়েছে, পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করলে ৫০০ টন ওজনের এই বিশালাকার স্টেশনটি ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় ভেঙে পড়া থেকে কে রক্ষা করবে? আইএসএস রাশিয়ার ওপর দিয়ে উড়ে না, ফলে সব ঝুঁকি আপনাদের। এমনকি এটা ভারত বা চীনেও পড়তে পারে। তার জন্য প্রস্তুত তো? 

রাশিয়ার এমন হুমকিতে বিশ্বব্যাপী কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে কিছু প্রশ্নের। একটি ফুটবল মাঠ আকৃতির এই কাঠামো যদি বিধ্বস্ত  হয়ে যায়, তাহলে কি হতে পারে? ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে? ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানেরই বা কী হবে? রাশিয়া কি আসলেই আইএসএস ধ্বংস করতে পারবে?

ছবি: নাসা

আইএসএস

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে বলা হয় প্রকৌশল বিদ্যা ও মানব দক্ষতার এক মাস্টারপিস। ১৯৯৮ সালে নির্মাণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫টি মহাকাশ সংস্থা মিলে এটা পরিচালনা করছে। 

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই বিশেষ বিজ্ঞানাগারটি মূলত নভোচারী এবং মহাকাশচারীদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেখানে ৬ জন ক্রুসহ মোট ১১ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। এই স্টেশনটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল গতিতে ছুটে চলে। ভূ-পৃষ্ঠকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে মাত্র ৯০ মিনিট। 
 
পুরু টাইটানিয়াম, কেভলার ও খুব ভালো মানের স্টিলের মতো শক্ত, টেকসই উপকরণ দিয়ে তৈরি এই স্টেশন। যার ওজন প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড। বিশাল এই মহাকাশ স্টেশনটি ধ্বংস করা কি রাশিয়ার পক্ষে আসলে সম্ভব?

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার হুমকি কি বাস্তবসম্মত?

পৃথিবীর অন্যতম সামরিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়া। পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটি সম্প্রতি নিজেদের একটি স্যাটেলাইট ধ্বংস করে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। আইএসএস-এর জন্য তাই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র একটি মূর্তিমান আতঙ্ক হতে পারে। 

এমন বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের অনেক পরিণতি থাকায় রাশিয়া এই দিকে নাও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই স্টেশন নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অন্যতম প্রধান অংশীদার রসকসমসকে ব্যবহার করতে পারে দেশটি। রসকসমসের প্রগ্রেস সাপ্লাই জাহাজ বা ভেজজা সার্ভিস মডিউল ছাড়া আইএসএস-এর কক্ষপথের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা সমন্বয় ঘটানো সম্ভব না। 

এই সমন্বয়ের অভাবে গ্রহাণুর সঙ্গে আইএসএস-এর সংঘর্ষ ঘটতে পারে, যা স্টেশন ও এখানে থাকা নভোচারীদের জন্যে মারাত্মক বিপজ্জনক। এই ডিভাইসগুলোতে থাকা থ্রাস্টারগুলো মূলত ব্যবহৃত হয় জ্বালানি সরবরাহ, মেরামত ও কক্ষপথের বাইরে পাঠাতে। অর্থাৎ, রুশ এই ডিভাইসের অভাবে আইএসএস গ্রহাণু বা মহাকাশ বর্জ্যের আঘাতে বিধ্বস্ত হতে পারে। যা সেখানে থাকা ক্রু ও পতিত হওয়া স্থানের অধিবাসীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে।

ছবি: সংগৃহীত

ধ্বংসের পরিণতি

খুব মজবুত উপকরণে তৈরি হলেও বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাপ ও চাপের কারণে কাঠামোটা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যা ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে আছড়ে পড়তে পারে। তবে, ১৩ শ মিটার প্রশস্ত কাঠামোটি অক্ষণ্ডিত অবস্থায় সরাসরি যে স্থানে পড়বে সেখানে ৪৭০ মিটার গর্ত হবে, সৃষ্টি করবে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প। আশেপাশে যারা থাকবে তারা বিস্ফোরণে জ্বলসে যাবে, মারা যাবে কয়েক হাজার মানুষ।

রাশিয়া আইএসএসকে অস্ত্র হিসেবে এভাবে ব্যবহার করলে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযান। মহাকাশ চুক্তির একটা বড় অংশে রয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া, এমন পদক্ষেপ বিশ্ব থেকে দেশটিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। ফলে এই সম্ভাবনা খুব কম। 

রাশিয়া বিধ্বস্ত না করলেও ২০৩১ সালের শেষ দিকে ধ্বংস করা হবে পৃথিবীর একমাত্র এই মহাকাশ স্টেশনকে। তখন নিয়ন্ত্রিতভাবে একে ধ্বংস করে প্রশান্ত মহাসাগরের পয়েন্ট নিমো নামের একটি স্থানে ফেলা হবে। যেটি পৃথিবীর স্থলভাগ থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থান। ধ্বংস করা মহাকাশযান ও মহাকাশ-বর্জ্যের শেষ ঠিকানা হিসেবে পরিচিত এই স্থানকে মহাকাশযানের ভাগাড়ও বলা হয়ে থাকে।

 

তথ্যসূত্র: বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার, নাসা, হোয়াট ইফ

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

7h ago