যে কারণে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর প্রতি আগ্রহী ভারত, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র

ধারণা করা হচ্ছে চাঁদে যদি পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে মানুষের বসতি গড়া, চাঁদে মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণ এবং মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন অভিযানও সম্ভব হবে।
ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান ৩ থেকে নেওয়া চাঁদের ছবি। ছবি: রয়টার্স
ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান ৩ থেকে নেওয়া চাঁদের ছবি। ছবি: রয়টার্স

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও একটি মহাশূন্যযান আজই চাঁদের  রহস্যময় দক্ষিণ মেরুর বুকে অবতরণ করবে। চন্দ্রযান ৩ নামের এই যানটি গত ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছিল। ভারতের পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদের এই রহস্যে ঘেরা অঞ্চল নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। 

এটি ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান। এবারের অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদে পানির উপস্থিতি সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করা। যদি পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তা হবে চাঁদের অন্যতম মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ।

কিছুদিন আগে রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫ চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এই যানটিরও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল। শুধু ভারত বা রাশিয়া নয়- চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও চাঁদের এই অঞ্চলটির প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু কেন?

ধারণা করা হচ্ছে চাঁদে যদি পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে মানুষের বসতি গড়া, চাঁদে মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণ এবং মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন অভিযানও সম্ভব হবে।

চাঁদে পানির অস্তিত্ব নিয়ে যত গবেষণা

১৯৬০ এর দশকের গোঁড়ার দিকে অ্যাপোলো অভিযানের আগেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে পেরেছিলেন যে চাঁদে পানির উপস্থিতি থাকলেও থাকতে পারে। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে এবং ৭০'র দশকের শুরুর দিকে অ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানে যাওয়া নভোচারীরা চাঁদের বুক থেকে যেসব উপাদান সংগ্রহ করে এনেছিলেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা চাঁদের বুকে পানির অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাননি।

২০০৮ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই উপাদানগুলোকে আবারও পরীক্ষা করে সেগুলোতে হাইড্রোজেনের উপস্থিতির প্রমাণ পান। ২০০৯ সালে ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান চন্দ্রযান-১ এ থাকা নাসার একটি যন্ত্র চাঁদের পৃষ্ঠে পানি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

একই বছর নাসা আরেকটি অনুসন্ধানের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চয়তা পায়।  এর আগে ১৯৯৮ সালে নাসার অপর এক অভিযান লুনার প্রসপেক্টর প্রমাণ পেয়েছিল যে দক্ষিণ মেরুর ছায়াময় গর্তগুলোতে পানি বা বরফের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।

চাঁদে পানি কেন গুরুত্বপূর্ণ

বিজ্ঞানীরা চাঁদের বুকে থাকা প্রাচীন পানির উৎস সম্পর্কে আগ্রহী কারণ এগুলো চাঁদের আগ্নেয়গিরি, ধূমকেতু ও গ্রহাণুর মাধ্যমে পৃথিবীতে আসা পদার্থ ও মহাসাগরের উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে।

ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান ৩ এর কাটআউটের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স
ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান ৩ এর কাটআউটের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স

যদি চাঁদে পর্যাপ্ত পানি থাকে, তাহলে তা চন্দ্রাভিযানে যাওয়া মানুষদের জন্য পানযোগ্য পানির উৎস হতে পারে এবং বিভিন্ন যন্ত্র ঠাণ্ডা করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই পানিকে তখন ভেঙ্গে জ্বালানির জন্য হাইড্রোজেন ও নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনে রূপান্তরিত করা যাবে। চাঁদে খননকার্য পরিচালনা এবং মঙ্গলগ্রহ অভিযানেও কাজে আসবে পানির এই উৎস।

১৯৬৭ সালে সম্পাদিত চুক্তি ইউনাইটেড ন্যাশনস আউটার স্পেস ট্রিটি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, রাষ্ট্র বা সংস্থা চাঁদের একক মালিকানা দাবি করতে পারবে না। তবে এই চুক্তিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাঁদের ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।

চন্দ্রাভিযানের মূলনীতি প্রতিষ্ঠা এবং এসব অভিযান যাতে মানবজাতির কল্যাণে হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আর্টেমিস অ্যাকর্ড নামের এক সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের ২৭টি দেশ। তবে রাশিয়া ও চীন এতে এখনো স্বাক্ষর করেনি।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ কেন এত বিপজ্জনক

চাঁদের বুকে অবতরণের চেষ্টা এর আগেও ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার লুনা-২৫ এর সর্বশেষ উদাহরণ। এর আগেও নভোচারীসহ অ্যাপোলো মিশন চাঁদের এই অঞ্চলে অবতরণের চেষ্টা করেছিল। দক্ষিণ মেরুতে প্রচুর গর্ত ও গভীর খাদ রয়েছে।

আইএসআরও'র চন্দ্রযান-৩ এখনো সঠিক পথেই রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৩ আগস্ট বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪ মিনিটে চাঁদে অবতরণ করার কথা এই যানটির।

অদূর ভবিষ্যতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েরই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments