সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর্থিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে: গবেষণা

একসময় আমাদের হাতে থাকা মুঠোফোনটির মূল কাজ ছিল যোগাযোগ করা কিন্তু এখন আর শুধু যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় না। ধীরে ধীরে এতে বিনোদনসহ নানান কাজে ব্যবহার হওয়ার পাশাপাশি কেনাকাটার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

একসময় আমাদের হাতে থাকা মুঠোফোনটির মূল কাজ ছিল যোগাযোগ করা কিন্তু এখন আর শুধু যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় না। ধীরে ধীরে এটি বিনোদনসহ নানান কাজে ব্যবহার হওয়ার পাশাপাশি কেনাকাটার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

একটি স্মার্ট ফোনের পর্দা এখন আর কোনো সুপার শপের চেয়ে কম নয়। পর্দায় এদিক-ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে বহু বিজ্ঞাপন।

এসব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিজ্ঞাপন আমাদের মনে সৃষ্টি করছে অবাস্তব কিছু প্রয়োজন। যে জিনিসটি একজন ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা তো দূরের কথা, হয়তো সুদূরতম শখের তালিকাতেও জায়গা পায় না– সেটিকে দেখা যেতে পারে তার অনলাইন শপিং কার্টে। এর কারণ হতে পারে বিজ্ঞাপনের পুনরাবৃত্তি, বিভিন্ন মূল্যছাড়ের লোভাতুর প্রস্তাব, কিংবা বিনামূল্যে ডেলিভারির মতো ঝা চকচকে ভোজবাজি। 

চূড়ান্ত ভোগবাদের এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের খরচের অভ্যাসটা পরিচালিত হচ্ছে তার সামাজিক মাধ্যমে কাটানো জীবনযাত্রা দিয়েই। 

সম্প্রতিকালে ব্যাংকরেট.কমের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক সংখ্যক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বিভিন্ন স্পনসর করা বিজ্ঞাপনের কারণে এমন হুটহাট খরচের দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

ছোট-বড় প্রায় সব ব্র্যান্ডই এখন অনলাইনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

ব্যাংকরেটের একজন বিশ্লেষক, সারা ফস্টার জানান, আপাতদৃষ্টিতে প্রাত্যহিক জীবনে মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা হিসেবে এই পণ্যের বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হয়। যে কারণে সাময়িকভাবে পণ্য বা সেবাগুলো অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক, অনেক বেশি জরুরি মনে হয়। কিন্তু অর্ডার করার একটা নির্দিষ্ট সময় পরই ক্রেতার খেয়াল হয়, এই খরচটা পুরোপুরি জলে গেলো।

৬৪ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীই এমন বিজ্ঞাপন দেখে আবেগের বশবর্তী হয়ে কেনাকাটা করে অন্তত একবার হলেও আফসোস করেন। 

সারা ফস্টারের মতে, সেইসব কেনাকাটা আমাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। সামাজিক মাধ্যমের রঙিন দুনিয়ার যে চিত্র আমরা দেখি, পণ্য বা সেবা হাতে আসার পর সে ধারণা ভেঙে যায়। 

এই জরিপ থেকে জানা যায়, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম শুধু মানুষের পকেট হালকা করতেই ভূমিকা রাখছে না; মানুষের সুখ-সুখের অনুভূতিকেও যেন একটা গণ্ডিতে আটকে ফেলছে এই বিজ্ঞাপনগুলো। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারী বা ক্রেতা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন, যা কিনা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বেশ বাজে প্রভাব ফেলে। 

৪৭ শতাংশ জেন-জি এবং ৪৬ শতাংশ মিলেনিয়াল প্রজন্ম নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কেন না তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে অন্যদের জীবনযাত্রার চাকচিক্য দেখে নিজেদের সঙ্গে তুলনা করে বসেন। প্রজন্মান্তরের কারণে আধিক্যটা কম হলেও এর মধ্যে আছেন ৩১ শতাংশ জেন-এক্স ও ২২ শতাংশ বেবি বুমার প্রজন্ম। আর এই তুলনার মানসিকতাটা খুব স্বাভাবিকত আসে নিরলসভাবে সারাক্ষণ নিউজফিডের পর্দায় অন্যের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হয়তো ছিল মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযুক্তি। কিন্তু এই সংযুক্তি যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বা অবাস্তব একটি প্রত্যাশা সৃষ্টি করে, তখন এমন সামাজিকতা কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে– সে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। 

এ নিয়ে ফস্টার বলেন, 'বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছে কিংবা বলা যায় সামাজিক মাধ্যমের বেড়ে ওঠাটা তারা দেখেছে। তাই তাদের মধ্যে প্রভাবটাও অন্য যে কোনো বয়সীদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।'

এখন যারা শিশু-কিশোর, তারাও এর বাইরে নেই। খুব কম বয়সে হাতে ধরিয়ে দেওয়া ফোন বা গ্যাজেট তাদের সময়েরও অনেক আগে সামাজিক মাধ্যমের দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিচ্ছে। সেখান থেকে 'টাকা' বা অর্থের বিষয়ে তাদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে এক অবাস্তব প্রত্যাশা, যা হয়তো বাস্তব জীবনে পূরণ করা সম্ভব নয়। সে থেকে খুব অল্প বয়সেই তারা মুখোমুখি হচ্ছে অসন্তোষের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মানসিক সুস্থতা।

তাই ফস্টার পরামর্শ দেন, কেনাকাটা করার আগে, অন্তত বিলটা চেক আউট করার আগে একটু ভেবে দেখবার। নয়তো আক্ষেপটা এড়ানো মুশকিল হবে। যে নকশায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সাজানো হচ্ছে, তাতে শুধু ব্যবহারকারীর জীবনের সবচেয়ে ভালো দিকগুলোই উঠে আসে। এই মাধ্যমটি এখন যেন, রাস্তার পাশের বড় বিলবোর্ড হয়ে উঠেছে। প্রতিটি পোস্ট, প্রতিটি ছবি, প্রতিটি আপডেটই একজন ব্যবহারকারীকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে যাচ্ছে। 

তথ্যসূত্র: ইয়াহু নিউজ, ফরচুন

 

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Depositors money in merged banks

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

4h ago