কম বয়সে অবসর নেওয়ার ৬ আর্থিক কৌশল

সাম্প্রতিক একটি জরিপ অনুসারে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ৬১ বা তার বেশি বয়সে অবসর নিতে চায়। ৪৫ বছরের আগে অবসর নিতে চায় ৪১ শতাংশ মানুষ।
ডিজাইন: কাজী আকিব বিন আসাদ

যদি কখনও কম বয়সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভ্রমণ, পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো কিংবা নিজের মতো জীবনযাপন করার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে আপনি একা নন।

সাম্প্রতিক একটি জরিপ অনুসারে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ৬১ বা তার বেশি বয়সে অবসর নিতে চায়। ৪৫ বছরের আগে অবসর নিতে চায় ৪১ শতাংশ মানুষ। অল্প বয়সে বা ৬০ বছরের আগে অবসরে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হতে পারে, কিন্তু 'ফায়ার (FIRE)' আন্দোলনের সমর্থকরা মনে করেন, এটি অবশ্যই সম্ভব।

ফায়ার আন্দোলন কী?

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স, রিটায়ার আর্লি- এই কথার সংক্ষিপ্ত রূপই হচ্ছে FIRE. এটি আয় বাড়ানো, খরচ কমানো এবং উদ্বৃত্ত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অর্থ জমা করার পরামর্শ দেয়, যাতে আপনি তুলনামূলক অল্প বয়সে অবসরে যেতে পারেন এবং আপনার সঞ্চয় থেকে জীবনযাপন করতে পারেন। কী পরিমাণ অর্থ জমাতে পারলে আপনি অবসরে যেতে পারবেন, তা নির্ভর করবে আপনার বার্ষিক খরচের উপর। এক্ষেত্রে সাধারণ সূত্রটি হচ্ছে- বার্ষিক খরচ x ২৫।

অর্থাৎ আপনি যদি বছরে ৫ লাখ টাকা খরচ করেন, তাহলে আপনার অবসর নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে ৫,০০,০০০ x ২৫ =১,২৫,০০০০০। তবে আপনি যদি খরচ অর্ধেক করে ফেলেন, তাহলে অর্ধেক সঞ্চয়েই আপনি অবসরে যতে পারবেন।

এই আন্দোলনের একজন অগ্রদূত পিট অ্যাডেনি বলেন, 'এই ফর্মুলা প্রায় নিখুঁত। আপনি যদি উপার্জনের চেয়ে কম খরচ করেন, তাহলে আপনি একটি ভালো উদ্বৃত্ত জমা করতে শুরু করবেন। তারপর যদি আপনি এই অর্থ বিনিয়োগ করেন, এটি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। যারা এই নীতি অনুসরণ করেন, তাদের বেশিরভাগই খুবই ভালো অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন।'

নিচে অর্থ সঞ্চয়ের জন্য কিছু পরামর্শ উল্লেখ করছি। এই পরামর্শগুলো এসেছে তাদের কাছ থেকে, যারা প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে অল্প বয়সে অবসরে গেছেন।

খরচের হিসাব রাখুন

'টাকাটা কোথায় খরচ হচ্ছে, না জানলে টাকা নিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব,' বলেন স্টিভ অ্যাডকক, যিনি তথ্যপ্রযুক্তি পেশা থেকে ৩৫ বছর বয়সে অবসর নিয়ে এখন সম্পদ গড়া ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে লেখালেখি করেন।

তিনি বলেন, 'আপনি হয়তো খেয়ালই করেননি যে আপনি মাসে ৫ হাজার টাকা নতুন কাপড় কেনার পেছনে খরচ করছেন। অথবা হয়তো বাইরে খেতে যাচ্ছেন আপনার ধারণার চেয়ে বেশিবার।'

কোথায় কোথায় খরচ হচ্ছে তা ভালোভাবে বোঝার জন্য স্প্রেডশিট বা বাজেট অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মাইকেল পাওয়ার্স একজন স্বীকৃত আর্থিক পরিকল্পনাকারী, যার প্রতিষ্ঠান মানুকা ফাইন্যান্সিয়াল অসংখ্য মানুষকে অল্প বয়সে অবসরে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, 'যদিও এই অ্যাপগুলো কিছু লোকের জন্য খুব ভালো, তবে অনেকে আছেন যারা তাদের প্রতিটি হিসাব লিপিবদ্ধ করে রাখেন না। কারণ তারা পর্যাপ্ত মনোযোগ দেন না।'

খরচের যৌক্তিকতা অনুধাবন করুন

আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থাটি হল খরচের খাতগুলো মূল্যায়ন করা যে খরচগুলো যথার্থ কি না।

পার্পল নামে পরিচিত একজন ব্লগার, যিনি তার মার্কেটিং পেশা থেকে মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'কোনো রেস্টুরেন্টে খেয়ে যদি ৫ হাজার টাকা বিল দেন, তাহলে বিবেচনা করতে হবে খাবারটি কি আপনার কঠিন শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের যোগ্য কি না। একই খাবার ৪ ভাগের ১ ভাগ খরচে বাড়িতে প্রস্তুত করা যেত কি না এবং আরও বেশি বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দময় পরিবেশে উপভোগ করা যেত কি না। যদি মনে করেন বাইরে খাওয়াটা আপনার খরচের তুলনায় যৌক্তিক, তাহলে সেই অর্থ বাজেটে রাখুন। আর যদি এত অর্থ খরচ অযৌক্তিক হয়, তাহলে এটি বাদ দিন।'

খরচ কমান

খরচের খাতগুলো জানার পর দেখুন কোথায় কাটছাঁট করা সম্ভব।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ব্র্যান্ড এক্সটেনশন অ্যান্ড লাইসেন্সিং পেশা থেকে অবসর নেওয়া ডায়ানা মেরিয়াম বলেন, 'কেন নেটফ্লিক্সের সাবসক্রিপশন থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্যাবল টিভির সংযোগের জন্য অর্থ ব্যয় করছেন? কেন বিনামূল্যে কথা বলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মোবাইলে অনেক বেশি অর্থ রিচার্জ করছেন?'

মেরিয়াম এখন অর্থ সংক্রান্ত পডকাস্ট হোস্ট করেন।

তিনি বলেন, 'আপনার আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে ফারাক, সেটি আসলে আপনার আয়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আয়-ব্যয়ের মধ্যে যদি কোনো ব্যবধান না থাকে, তাহলে সম্পদ বাড়ানো বা ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া কিংবা আপনার অর্থ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।'

যাতায়াত ও খাবার খরচের দিকে মনোযোগ দিন

মেরিয়াম বলেন, 'এই খাতগুলোতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি খরচ করে। তাই এই খাতগুলো থেকে আপনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাটছাঁট করতে পারেন। আপনাকে আর বাকি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।'

অ্যাডেনি বলেন, 'ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের সমাজের একটা বড় সমস্যা।'

তিনি সাইকেল ও গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্য, অর্থ ও সামাজিক যোগাযোগ- ব্যক্তিগত গাড়ি আধুনিক জীবনের প্রায় সবকিছুই ধ্বংস করে। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বাদ দিলে জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যোগ হতে পারে।'

বাসস্থানের খরচ তুলনামূলক কম এমন জায়গায় থাকুন

পার্পলের মত হচ্ছে, খরচ কমানোর জন্য বাসস্থানের খরচ কমানো জরুরি। আমরা যদি ঢাকার উদাহরণ দিই, তাহলে বলা যায় গুলশানে না থেকে ধানমন্ডিতে থাকলে আর্থিকভাবে আরেকটু ভালো থাকা সম্ভব।

ঋণ নেবেন না

ঋণ নেওয়া, বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড থেকে, অবসরের আগে করা শীর্ষ ভুলগুলোর একটি।

অ্যাডকক বলেন, 'ক্রেডিট কার্ডের ঋণের মতো সম্পদ ধংসকারী আর কিছু নেই। ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদের হার সাধারণত অনেক বেশি থাকে।'

তার মতে, কেবল তখনই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত যখন এগুলোর মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Comments