দেউলিয়া হওয়ার পথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

কিছু আয়ের আশায় রাজধানীর নীলক্ষেতে চলমান লকডাউনে কয়েকটি দোকান খুলে বিক্রির চেষ্টা দোকানদারদের। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

একের পর এক বিধিনিষেধের কারণে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের দোকানগুলোর আয় কমে গেছে। পাশাপাশি ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে তাদের। ফলে এসব দোকান এখন স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পথে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীয়া জানিয়েছেন, কর্মীদের বেতন, ভাড়া, বিদ্যুৎ ও সিকিউরিটি বিল পরিশোধসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে তাদের ঋণ নিতে হয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে গত চার মাসের বেশিরভাগ সময় দোকান বন্ধই রাখতে হয়েছে তাদের।

কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় তাদের অবস্থা আরও করুণ হয়ে পড়েছে। টিকে থাকার প্রয়োজনে গতকাল রোববার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ৬ আগস্ট থেকে দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এসব বিষয় নিয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকার নিউমার্কেটে সংবাদ সম্মেলন করেছে সমিতি। রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর থেকে সরকার যেভাবে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে, তাদের ওপর থেকেও তেমনভাবে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

নেতারা এ সময় বলেন, কিছু ব্যবসায়ী এখন বাধ্য হয়ে সবজি ও সিগারেট বিক্রি করছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য কাউকে আবার রিকশা চালাতে হচ্ছে।

সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে আছেন। দোকান বন্ধ। তাদের আয় একেবারেই নেই। জীবন থমকে গেছে। দোকান যদি এভাবে দিনের পর দিন বন্ধ থাকে, আমরা পুরোপুরি ভেঙে পড়ব।'

ক্ষুদ্র ব্যবসা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তবুও, করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পতনে এসব ব্যবসার যে দুর্দশা তৈরি হয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান করা হয়নি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫৬ লাখ পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠান আছে, যা মোট পণ্য বাণিজ্যের ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এই খাতে প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশে মহামারির কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা ও বিধিনিষেধের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেশিরভাগ দোকান কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি।

ঢাকার গাউসিয়া মার্কেটের আঁখি ফ্যাশন গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, 'দোকানের কর্মীদের বেতন দিতে হয়। এ ছাড়া, দোকান ভাড়া ও বিদ্যুতের বিল বাড়ছে। আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি।'

সরকারকে দোকানের ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল মওকুফের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সুমন তার সাত জন কর্মচারীকে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা করে দেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে মহামারি শুরুর পর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ ব্রাইটনেসের মালিক মাহিন হোসেন জানিয়েছেন, এক বছর ধরে ব্যবসা ছোট হয়ে আসছে তার।

তিনি বলেন, 'মহামারি শুরুর পর থেকে যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি, তাতে আমরা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পথে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমরা আর ঋণও নিতে পারছি না।'

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের মোবাইল এক্সেসরিজ দোকান এমভি এন্টারপ্রাইজের মালিক সোহেল রানা বলেন, 'মহামারির প্রভাব আমাদের ওপর দিয়ে কতটা যাবে? একের পর এক বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে। দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া ছাড়া এ সমস্যার আর কোনো সমাধান নেই। দোকান খুলতে পারলে কিছু বিক্রি হবে।'

ইসলামপুরের পাইকারি পোশাক ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, 'আমরা অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে ধারে কাপড় বিক্রি করেছি। কিন্তু, সেই টাকা এখনো পরিশোধ করেননি তারা। দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কীভাবে দেবো?'

তিনি জানান, তার ৩০ লাখ টাকার দেনা হয়েছে, যার মধ্যে ২০ লাখ টাকাই ব্যাংক ঋণ।

এলিফ্যান্ট রোডের হকার রমজান আলী জানান, গত চার মাস ধরে তিনি বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি।

'আমি ৩০ হাজার টাকা টাকা ঋণ করেছি। তবে এ টাকা কবে শোধ করতে পারব জানি না', তিনি বলেন।

পান্থপথে একটি মোবাইল ফোন মেরামতের দোকানে কাজ করা আবু জাফর বলেন, 'আমার সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। কোনো কাজ নেই। আয়ও নেই। খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।'

জাফরের বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত। তাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তার পরিবারকে কিছুদিন আগে ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করতে হয়।

প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য সরকারকে একটি সহায়তা প্রকল্প চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, 'অন্যান্য অনেক দেশে সরকার এ খাতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে। বন্ধ থাকা দোকান, উদ্যোক্তা ও কর্মচারীরা সহায়তা পেয়েছে। বাংলাদেশেও একই কাজ করা উচিত। কারণ, দোকান মালিকরা সমস্যার মধ্যে আছেন।'

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম। 

Comments

The Daily Star  | English

Response to J&K Terror Attack: India gives forces ‘operational freedom’

Indian Prime Minister Narendra Modi has given the country's military "operational freedom" to respond to a deadly attack in Kashmir last week, a senior government source told AFP yesterday, after New Delhi blamed it on arch-rival Pakistan.

3h ago