প্রচুর খালি কন্টেইনার, কিন্তু কাজে লাগছে অল্প

অনেকেই অবাক হবেন এটা শুনে, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলো (আইসিডি) রপ্তানি পণ্যের ভারে ভারাক্রান্ত, কিন্তু খালি কন্টেইনারের অভাবে তারা সময়মত সেগুলোকে জাহাজীকরণ করতে পারছে না। অপরদিকে, এ মুহূর্তে একই আইসিডিতে অসংখ্য খালি কন্টেইনার পড়ে আছে।
গতকাল পর্যন্ত ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে ২৬ হাজার ৩৩৬টি খালি কন্টেইনার অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। তবে, এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য উপযোগী নয় এবং বাকিগুলো বুকিং দেওয়া যাচ্ছে না।
পড়ে থাকা খালি কন্টেইনারের মধ্যে ১৩ হাজার ৬৪৭টি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার এবং বাকি ১২ হাজার ৬৮৯টি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব মো. রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছোট আকারের কন্টেইনারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনারগুলো চাহিদা রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বেশি।’
তিনি জানান, যদিও আইসিডিগুলোতে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রায় ১২ হাজার ৬৮৯টি খালি কন্টেইনার আছে, তবুও বিভিন্ন কারণে সেগুলোকে বুক করা যাচ্ছে না।
কিছু ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে এবং সেগুলোতে মাল পরিবহন সম্ভব নয়, জানান তিনি।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘কন্টেইনার সংকটের এ সমস্যাটি বৈশ্বিক। এ মুহূর্তে পড়ে থাকা ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের খালি কন্টেইনারগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না মূলত দুটি কারণে। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে মাদার ভেসেলে জায়গার অভাবের কারণে বেশ কিছু শিপিং কোম্পানি বা এমএলও তাদের মালিকানাধীন কন্টেইনারগুলো বুকিং দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। পক্ষান্তরে যারা বুকিং নিচ্ছেন, তারাও তীব্র কন্টেইনারের সংকটের কারণে ঠিক মতো সেবা দিতে পারছে না।’
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যেসব এমএলও’র খালি কন্টেইনারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সেগুলো হচ্ছে হাপাগ-লয়েড, মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি), হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন, সিএমএ সিজিএম ও মায়ের্স্ক লাইন।
সুজন বলেন, ‘এসব এমএলওদের অনেকেই খালি কন্টেইনারের তীব্র সংকটে ভুগছে।’
জার্মান শিপিং প্রতিষ্ঠান হাপাগ লয়েডের স্থানীয় প্রতিনিধির ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের ৭০০ কন্টেইনারের সাপ্তাহিক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৩৯০টি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার আছে।
হাপাগ লয়েডের স্থানীয় প্রতিনিধি ও জিবিএক্স লজিসটিক্সের সাধারণ ব্যবস্থাপক (অপারেশনস) আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর থেকে আরও ৩০০ টিইইউস (কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতার একক) পরিমাণ ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের খালি কন্টেইনার নিয়ে আসছেন, যেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করা যাবে।
একাধিক শিপিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মতে, তাদের বেশিরভাগই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে থেকে ইউরোপগামী মাদার ভেসেলে জায়গার তীব্র সংকটের কারণে কন্টেইনার বুকিং দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।
এমএসসি’র মালিকানাধীন এক হাজার ৬৫০টি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার আইসিডিতে পড়ে আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কলম্বো ও সিঙ্গাপুরের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া মাদার ভেসেলগুলোতে খালি জায়গার স্বল্পতার কারণে ইউরোপগামী কন্টেইনার বুকিং দেওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রায় বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়াও, মহামারির কারণে তাদের একটি বড় সংখ্যক কন্টেইনার ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।
হংকং ভিত্তিক ওরিয়েন্ট অভারসিজ কন্টেইনার লাইনের (ওওসিএল) তিন হাজারটি ৪০ ফুট দীর্ঘ কন্টেইনার এই মুহূর্তে আইসিডিগুলোর কাছে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু, এ প্রতিষ্ঠানটিও মূলত একই কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানির জন্য কন্টেইনারের বুকিং নেওয়া স্থগিত করে রেখেছে।
ওওসিএলের কান্ট্রি হেড গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী জানান, তারা মূলত দুটি কারণে নতুন বুকিং নিচ্ছেন না, বেশিরভাগ মাদার ভেসেল তাদের ধারণক্ষমতা কমিয়ে এনেছে এবং অনেকেই তীব্র জাহাজ জটের কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্দরে যাত্রা বন্ধ রেখেছে।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments