বাণিজ্য

ফেনীতে চামড়ার দামে এবারও ধস

ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে এবারও ধস নেমেছে। এলাকাভেদে গরু-মহিষের ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর কোরবানিতেও ফেনীতে চামড়ার দামের একই রকম চিত্র ছিল।
ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে গত বছরের মতো এবারও ধস নেমেছে। ছবি: স্টার

ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে এবারও ধস নেমেছে। এলাকাভেদে গরু-মহিষের ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর কোরবানিতেও ফেনীতে চামড়ার দামের একই রকম চিত্র ছিল।

এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার দাম ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে ফেনীর চামড়া ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে তা মানা হয়নি।

ফেনীতে এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহের জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখাও মেলেনি তেমন। ফলে, অনেকে চামড়া সরাসরি বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন। বিক্রি করতে না পেরে চামড়া পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে কোথাও কোথাও।

ফেনী পৌরসভার পশ্চিম উকিলপাড়ার বাসিন্দা মো. ফরহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অপেক্ষায় সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বাড়িতেই ছিলেন। সন্ধ্যার পর তিনি চামড়া নিয়ে শহরের ট্রাংক রোডে অস্থায়ী চামড়ার বাজারে যান। সেখানে এক লাখ ১২ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুর চামড়াটি বিক্রি করেন ২০০ টাকায়।

পূর্ব বিজয়সিংহ গ্রামের হারিছ আহম্মদ ট্রাংক রোডেই ৬৪ হাজার টাকার গরুর চামড়াটি বিক্রি করেন মাত্র ১০০ টাকায়।

অন্যদিকে, দাগনভূঁঞার রামানন্দপুর গ্রামের শওকত হোসেনের এক লাখ তিন হাজার টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম ওঠে মাত্র ১৫০ টাকা।

সদর উপজেলার দমদমা হাফেজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি আলতাফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা আড়তদারদের কাছে এবার ১০০টি চামড়া গড়ে ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

শান্তি কোম্পানি রোডের ইসলামিয়া এতিম খানার সভাপতি কে বি এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া ২৩২টি গরুর চামড়া তারা বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকা দরে।

সোনাগাজীর বাদুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাসারও জানান যে অন্যান্য বছরগুলোতে চামড়া কেনার জন্য এলাকায় অনেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। শহরের বাইরে গ্রামের দিকের চিত্রও ছিল একই রকম। তিনি বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীদের না পেয়ে ৯৫ শতাংশ চামড়া স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, সদর উপজেলার চাড়িপুর এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন জানান, তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ২৫০টাকা করে পাঁচটি চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতি চামড়ায় ৩০ টাকা করে লোকসান দিয়ে তাকে সেগুলো ২২০ টাকা করে বিক্রি করতে হয়।

নুর উদ্দিন বলেন, ‘অনেক জায়গায় চামড়া বিক্রি করতে না পেরে তা মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।’

ফেনীর বড় চামড়ার আড়তগুলোর অবস্থান পাঁচগাছিয়া বাজারে। এখানকার নিজাম উদ্দিন নামের এক আড়তদারের দাবি, আকারভেদে তিনি প্রতিটি চামড়া কিনেছেন ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। তার এবারের লক্ষ্য ১০ হাজার গরু-মহিষের চামড়া কেনা।

আরেক আড়তদার হেলাল উদ্দিন জানান, ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে তিনি চামড়া কিনেছেন।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পাঁচগাছিয়া বাজারে এক সময় ৪০ থেকে ৪৫ জন চামড়ার আড়তদার ছিলেন। কিন্তু, বছরের পর বছর ব্যবসায় মন্দা চলায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

এখন এখানে কেবল ১৫ থেকে ১৬ জন আড়তদার টিকে আছেন বলে জানান তিনি।

এখানকার আড়তদাররা বলছেন, ঢাকার আড়তদারদের কাছে বিক্রি করলে, চামড়ার দাম বছরের পর বছর বকেয়া থাকে। তাই, এই ব্যবসায় টিকে থাকা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

Comments

The Daily Star  | English

3 Bangladeshis killed in Malaysia building collapse; 4 still missing

Rescuers are still searching for four missing workers believed to be pinned under the rubble where a building under construction had collapsed at about 9:45pm (local time)

1h ago