‘আফসোস বলে কোনো শব্দ নেই আমার জীবনে’

দেশের প্রথম নাটকের দল ড্রামা সার্কেলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মাসুদ আলী খান। ১৯৫৬ সালে মঞ্চের মাধ্যমে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। মঞ্চ ছাড়াও টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করেছেন ৯৩ বছর বয়সী এই গুণী শিল্পী।
মাসুদ আলী খান। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

দেশের প্রথম নাটকের দল ড্রামা সার্কেলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মাসুদ আলী খান। ১৯৫৬ সালে মঞ্চের মাধ্যমে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। মঞ্চ ছাড়াও টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করেছেন ৯৩ বছর বয়সী এই গুণী শিল্পী।

প্রবীণ এই অভিনেতার এখন সময় কাটে ঘরে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হয়েছিলেন গুণী এই অভিনেতা।

একসময় নিয়মিত অভিনয় করলেও এখন অভিনয় থেকে দূরে আছেন, কষ্ট হয় না?

অভিনয় করতে পারি না সেজন্য অবশ্যই কষ্ট হয়। খুব মিস করি চেনা জগতটাকে। ক্যামেরা-অ্যাকশন, ইউনিটের মানুষদের ভীষণ মিস করি। অভিনয় ছিল আমার প্রাণ। অভিনয় ছিল আমার ভালোবাসা। সেখান থেকে দূরে থাকতে খুব কষ্ট হয়, খারাপ লাগে। বয়সের কারণে চাইলেও আরও যেতে পারি না। তাই ঘরের মধ্যেই সময় কাটছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে খুব ইচ্ছে করে কিন্তু, ঘরের বাইরে যেতে পারি না।

ঘরে কীভাবে সময় কাটছে আপনার?

খবরের কাগজ পড়ি, গান শুনি, টেলিভিশন দেখি। বই পড়তে ইচ্ছে করে। আগের মতো পড়তে পারি না। সেমি ক্ল্যাসিক্যাল শুনি। রবীন্দ্রনাথের গান শুনি। ৮ বছর আগে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে গিয়েছিল। তারপর থেকে ঘরবন্দী। মাঝে হানিফ সংকেতের একটি নাটক করেছিলাম। ওটাই শেষ কাজ ছিল।

আপনাদের সময়ের নাটক আর এখনকার নাটক নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?

এখনকার নাটক দেখি। আরও যত্নশীল হওয়া দরকার। যত্ন নিয়ে কাজ করা দরকার। এখনকার কাজে যত্নের ছোঁয়া কম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। এখন সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কাজের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সময়ে বেতার নাটকে ৩ দিন রিহার্সেল করে রেকর্ডিং করতাম। টেলিভিশন নাটকেও কয়েকদিন ধরে চলত রিহার্সেল। তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতাম। টেলিভিশন নাটকের রিহার্সেল করার সময় আমরা সংলাপ মুখস্থ করে ফেলতাম। সম্পূর্ণ চরিত্র জানা হয়ে যেত। ফলে একটি নাটক পরিপূর্ণ নাটক হয়ে উঠত।

অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল কীভাবে?

স্কুলজীবনে প্রথম নাটকে অভিনয় করি। তারপর একসময় কলকাতা চলে যাই। আবার ফিরে এসে কুমিল্লার একটি স্কুলে পড়ালেখা শুরু করি। ফের নাটকে অভিনয় করি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। একসময় জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু, অভিনয়ের পোকা মাথা থেকে যায়নি। ১৯৫৬ সালে ড্রামা সার্কেল গঠিত হয়। এদেশের প্রথম নাটকের দল হচ্ছে ড্রামা সার্কেল। শুরুর কিছুদিন পর থেকেই দলটির সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর  অনেক বছর টানা অভিনয় করেছি। আরও পরে এসে বেতার ও টেলিভিশনে। মঞ্চটাই আমার অভিনয় জীবনের পাঠশালা ছিল।

কোনো স্মৃতি কী পিছু টানে?

কত স্মৃতিই তো পেছনে টেনে নিয়ে যায়। বয়স হলে এটা আরও বেশি হয়। একটি ঘটনা শেয়ার করি- ১৯৫৬ সালে ড্রামা সার্কেলে যোগ দেওয়ার পর পুরনো ঢাকায় কবি হাসান হাফিজুর রহমানের বাসার নিচতলায় আমরা রিহার্সেল করতাম। তখন দিনের পর দিন আড্ডা দেওয়ার কথা মনে পড়ে। সেসব আড্ডা ছিল বড় সুখের, বড় আনন্দের এবং বড় ভালোলাগার। মাঝে মাঝে ওইসব দিনের কথা খুব মনে পড়ে। চাইলেও আড্ডার দিন আর ফিরে পাব না।

একজন শিল্পী হিসেবে কোনো অতৃপ্তি কাজ করে কী?

শত শত নাটকে অভিনয় করেছি। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আফসোস বলে কোনো শব্দ নেই আমার জীবনে। অভিনয় জীবন নিয়ে তৃপ্ত। মানুষের ভালোবাসা আমাকে দারুণভাবে শক্তি জুগিয়েছে অভিনয়ে। জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত।

ছেলেবেলার কোন ঘটনা মনে পড়ে?

ছেলেবেলার অনেক ঘটনা মনে পড়ে। ছেলেবেলায় ভীষণ দুষ্টু ছিলাম। গাছে উঠে আম পেড়ে খাওয়ার কথা মনে আছে। বিশেষ করে আম পাকার সময়ে গাছে উঠে আম পেড়ে খেতাম। একা একা খেতাম না। বন্ধুরা মিলে খেতাম। সেসব বন্ধুদের কথাও মনে পড়ে। কোথায় হারিয়ে গেল দিনগুলো? কোথায় হারিয়ে গেল মানুষগুলো? মায়ের সংগে পালকিতে নানাবাড়িতে যাওয়ার স্মৃতিও মনে পড়ে। আমাদের গ্রাম থেকে নানাবাড়ি ৬ মাইল দূরে ছিল। বৃষ্টির দিনে নৌকা করে, আর শুকনো মৌসুমে পালকি করে যেতাম। বিল ও নদী পাড়ি দিতাম। নদীর নাম ধলেশ্বরী।

বাবার আদর ও বাবার শাসনের কথা মনে পড়ে। বাবা কলকাতায় চাকরি করতেন। পূজার ছুটিতে এবং গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে আসতেন। জীবন থেকে কোথায় হারিয়ে গেছে সেই মধুর দিনগুলো?

Comments

The Daily Star  | English

Public medical colleges: 86 doctors, 136 students punished since August 5

Over the last two months, at least 86 physicians and 136 medical students at eight public medical colleges and hospitals across the country have faced different punitive actions over various allegations, including “taking a stance against” the quota movement.

1h ago