গাড়ি বিক্রির সব টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছিলেন আজিম: সুজাতা

নায়ক আজিমের সঙ্গে সুজাতা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক আজিম। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি মিলিটারিদের ২ মাস বন্দি ছিলেন তিনি। সেই গল্প দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন তার স্ত্রী রূপবানখ্যাত নায়িকা সুজাতা।

সুজাতা বলেন, 'আজিম ছিলেন উদার মনের মানুষ। তার মতো উদার ও বড় মনের মানুষ এ জীবনে কমই দেখেছি। এটা শুধু আমি নই, সেই সময়ের অনেকেই জানতেন। আজিমের কাছে কিছু চেয়ে কেউ কোনো দিন খালি হাতে ফেরেননি। এতোটাই উদার মনের ছিলেন তিনি।'

'মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। এমনভাবে মানুষকে দান করতেন, কাউকে সে কথা বলে বেড়াতেন না। কখনো কখনো আমাকেও বলতেন না,' যোগ করেন তিনি।

সুজাতা বলেন, 'আজিম একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। ২ হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। পারিবারিকভাবে আজিম ছিলেন খুবই ধনী ঘরের সন্তান। তখন আজিম শুটিংয়ে যেতেন ব্যক্তিগত গাড়িতে করে। ষাটের দশকের শুরুর কথা বলছি। শুটিং স্পটে কম মানুষই তখন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতেন।'

'বিয়ের পর আমার শাশুড়ি একবার আজিমকে বলেছিলেন, বউমাকে কি উপহার দিয়েছ? আজিম শুধু হেসেছিলেন। তারপর আমার জন্য বিয়ের পর একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। তখন গাড়িটির দাম ছিল ২৫ হাজার টাকা,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, '১৯৭১ সাল চলে আসে। সারাদেশে যুদ্ধ চলছে। আজিম যা পারছেন বিলিয়ে দিচ্ছেন দেশের জন্য। একদিন আমাকে দেওয়া গাড়িটি আজিম বিক্রি করে সবগুলো টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেন। আমাকে বলেছিলেন, সবার আগে  প্রয়োজন দেশ, গাড়ি বেঁচে থাকলে কেনা যাবে।'

সুজাতা বলেন, 'তখনই বুঝে ফেলেছিলাম আজিম কতটা বড় মনের এবং কতটা দেশ প্রেমিক মানুষ। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি মিলিটারিদের হাতে ধরা পড়ে যান। ২ মাস তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অনেক নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছিল তখন তাকে। পাকিস্তানি মিলিটারিদের একজন কর্নেল তাকে অবশ্য চিনতে পেরেছিলেন। কেননা, আজিম নায়ক হিসেবে তাদের ওখানেও জনপ্রিয় ছিলেন।'

তিনি বলেন, 'ছোট্ট একটি রুম থেকে ৫২ জন একসঙ্গে বের হয়েছিলেন। অনেকের অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিল নির্যাতিত হয়ে। বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে আজিম আবারও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে শুরু করেন। তার বক্তব্য ছিল, দেশ স্বাধীন করতেই হবে। এমনই ছিল আজিমের দেশ প্রেম। এমই ছিল তার দেশের প্রতি ভালোবাসা।'

'তারপর চূড়ান্ত বিজয় আসার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আজিমকে অনেক খুশি দেখেছিলাম। আজিম ছিলেন সত্যিকারের একজন দেশ প্রেমিক ছিলেন,' যোগ করেন সুজাতা।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago