নাটকের ‘মা’ ডলি জহুর
টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি জহুর অভিনয় করেছেন শতাধিক সিনেমাতেও। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এবং ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
তার অভিনীত ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের নীলু ভাবীর চরিত্রটি এখনও মানুষ মনে রেখেছে। এক সময় মঞ্চেও অভিনয় করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি নাট্যচক্রর সঙ্গে জড়িত হন। আরও পরে বাংলা থিয়েটারের হয়ে মামুনুর রশীদের পরিচালনায় অভিনয় করেন ‘মানুষ’ নাটকে।
এ ছাড়া আরণ্যক নাট্যদলের ‘ইবলিশ’ ও ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকেও কিছুদিন অভিনয় করেছেন ডলি জহুর।
প্রশংসিত কিছু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। এর মধ্যে রয়েছে—আগুনের পরশমণি, শঙ্খনীল কারাগার, ঘানি, দারুচিনি দ্বীপ, রং নম্বর ইত্যাদি।
একটা সময়ে তিনি টেলিভিশন নাটক শুরু করেন মায়ের চরিত্র দিয়ে। অসংখ্য নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে অনেক শিল্পীর মা হয়ে গেছেন তিনি। নব্বই দশকের পর থেকে এই প্রজন্মের শিল্পীরা তাকে মা বলেই সম্বোধন করেন।
ডলি জহুরের একমাত্র সন্তান রিয়াসত আজিম সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। একবছরেরও বেশি সময় ধরে ছেলের সঙ্গেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকছেন।
গতকাল শনিবার ছিল ডলি জহুরের জন্মদিন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন দিলারা জামান, আবুল হায়াত ও শর্মিলী আহমেদ।
ধানমন্ডি থেকে একসঙ্গে রামপুরা টিভি সেন্টারে যেতাম: দিলারা জামান
ডলি জহুর আমার ছোট বোনের বন্ধু ছিল। অভিনয় করতে এসে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি, একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। একটি নাটকের কথা বলতেই হয়। বিটিভির খুব আলোচিত নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’তে ডলি জহুর পরিবারের বড় বউ নীলুর চরিত্রে অভিনয় করেছে। আমি ছিলাম শাশুড়ি। নীলু চরিত্রে অভিনয় করে সেই সময়ে ডলি জহুর অনেক সুনাম অর্জন করে।
‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের কাজ করার সময় ধানমন্ডি থেকে একসঙ্গে রিকশায় করে রামপুরা টিভি সেন্টারে যেতাম শুটিংয়ে। আমাদের দুজনের বাসাই তখন ধানমন্ডিতে। শুটিং শেষ রিকশায় করে গল্প করতে করতেই ফিরতাম। সেসব দিনের কথা খুব মনে পড়ে।
ডলি এখন সিডনিতে। মাঝেই মাঝেই ফোনে কথা।
ডলি জহুর একজন লক্ষ্মী মানুষ। এমন লক্ষ্মী মানুষ কম হয়।
অভিনয়ে তার শতভাগ মনোযোগ: আবুল হায়াত
ডলি জহুরের সঙ্গে অনেক টিভি নাটকে ও সিনেমায় অভিনয় করেছি। একসঙ্গে অনেকদিন কাজ করে বুঝেছি, তিনি অভিনয়টাকে খুব ভালোবাসেন। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই, এতো এতো মানুষের ভালোবাসা তিনি অর্জন করতে পেরেছেন।
কেবল শিল্পী হিসেবেই নয়, তিনি মানুষ হিসেবেও অনেক ভালো। গুণীর কদর করার বিষয়টি তার মধ্যে প্রবল।
ডলি জহুর অভিনয় শিল্পের প্রতি কখনো অবহেলা করেননি। জুনিয়রদের প্রতিও তার ভালোবাসা অনেক। এ জন্যই বহু শিল্পী তাকে মা বলে ডাকেন। এটাই তার জন্য বড় প্রাপ্তি।
একমাত্র সন্তানের কাছে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আছেন। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। করোনার সময়ে তার এবং তার পরিবারের সবার জন্য দোয়া রইল।
বেইলি রোডে ডলির মঞ্চ নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছি: শর্মিলী আহমেদ
ডলি জহুর আর আমার ছোট ভাইয়ের জন্মদিন একই দিনে। আমার ছোট ভাই মারা গেছে। কাজেই ডলির জন্মদিনে আমার ছোট ভাইকে খুব মনে পড়ে।
ডলির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা পারিবারিক। একটা সময় আমরা পাশাপাশি থেকেছি। তখন ডলির বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই নিমন্ত্রণ করত। আমার বাসায়ও তাকে নিমন্ত্রণ করেছি।
ডলি সিডনি থেকে নিয়মিত ফোন করে। ফোনে আমাদের কথা তো শেষই হয় না।
ডলিকে সবাই ভালো অভিনেত্রী হিসেবে জানেন। আমিও তাই জানি। কিন্তু তার বাইরে সে ভীষণ সংসারী। স্বামী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে যায়। এ কারণেই ছেলের কাছে চলে গেল। ওখানে ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনিদের নিয়ে বেশ আছে।
ডলি অসম্ভব গুণী একজন অভিনেত্রী। একটা সময় সে মঞ্চে মামুনুর রশীদের দলের হয়ে নিয়মিত কাজ করত। সে সময় ফোন করে আমাকে বলত, ‘দুলাভাইকে নিয়ে এসো আপা’। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে যেতাম বেইলি রোডে ডলির নাটক দেখতে।
ডলির জন্য আমার আশীর্বাদ চিরদিন থাকবে। দূরে থাকলেও ভালো থাকুক সে।
Comments